মো. রফিকুল ইসলাম: রসগোল্লার শিরায় কালোজিরা দেয়া নিমকি ভিজিয়ে খাওয়া খাদ্য সংস্কৃতির পুরনো একটি ঐতিহ্য। হাট-বাজারে তো বটেই, এলাকার খাবারের স্থায়ী দোকানেও এটি প্রচুর বিক্রি হয়। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলে ভ্রাম্যমাণ হালুইকরেরা পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে আসছেন মিষ্টি-নিমকি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে গ্রামীণ এ খাবারের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারেও দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের টংগুয়া গ্রামের পূর্ব মাদারডাঙ্গার নিজাম উদ্দিন (৬২) এখনও প্রতিটি রসগোল্লা ও নিমকি ৫ টাকায় বিক্রি করছেন। এতে তাঁর মুনাফা কম হলেও বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। মিষ্টি-নিমকি বিক্রি করে নিজাম উদ্দিন তার নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করে সাড়া ফেলেছেন।
মিষ্টি-নিমকি তৈরি ও বিক্রিকারী নিজাম উদ্দিন জানান, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছেন মিষ্টি-নিমকি। যুবক বয়সে কৃষি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ২০০০ সালের শুরুর দিকে তাঁর এক ভগ্নিপতি ময়মনসিংহ থেকে তাদের এলাকায় এসে বসবাস শুরু করেন এবং তাঁর মাধ্যমেই তিনি মিষ্টি-নিমকি তৈরি করা রপ্ত করেন। এরপর তিনি একেই জীবিকা হিসেবে বেছে নেন। এলাকায় তাঁর মিষ্টি-নিমকির সুনাম ও চাহিদা ভালোই রয়েছে। অনেকেই যেকোনো অনুষ্ঠানের জন্য তাঁর মিষ্টি-নিমকির অগ্রিম অর্ডার দেন।
তিনি নিজ এলাকায় গাভীর দুধসহ প্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহ করার পর পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় নিয়মিত মিষ্টি-নিমকি তৈরি করেন। তিনি প্রতি সপ্তাহে ১৫-২০ কেজি মিষ্টি ও সমপরিমাণ নিমকি তৈরি করেন। ব্যবসার শুরুতেই তিনি মিষ্টি ও নিমকি প্রতিটি মাত্র এক টাকা করে বিক্রি করতেন। বর্তমানে প্রতিটি মিষ্টি ও নিমকি ৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন। মহামারী করোনাভাইরাসের সময় থেকে জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি-নিমকিরও দাম বৃদ্ধি করেছেন তিনি।

শীতের সকালে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেসময় তিনি তাঁর স্ত্রী সাহারা বেগম ও ছোটছেলে সোলায়মান ইসলামকে নিয়ে মিষ্টি-নিমকি তৈরি করছেন। এসময় গরম মিষ্টি আর শিরায় ডুবিয়ে নিমকি খেতে উপস্থিত হয়েছেন অনেকেই। স্থানীয় যুবক রহিদুল ইসলাম রাফি জানান, নিজাম চাচার মিষ্টি-নিমকির স্বাদই আলাদা। আমরা প্রায়শই তাঁর তৈরি মিষ্টি-নিমকি খেয়ে থাকি। যা খেতে ভালোই লাগে।
নিজাম উদ্দিন আরও জানান, বর্তমানে দুধ, চিনি, ময়দা ও ভোজ্য তেলসহ মিষ্টি-নিমকি তৈরির উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরেও মান ঠিক রেখে মিষ্টি-নিমকি তৈরি ও বিক্রয় করছি। আমার কিছু রেগুলার গ্রাহক রয়েছেন। তারা নিয়মিতই আমার নিকট থেকে মিষ্টি-নিমকি ক্রয় করেন। তাঁর তৈরিকৃত প্রতিকেজিতে ৫৫-৬০টি মিষ্টি ও অন্তত ৬০টি নিমকি হয়। তিনি প্রতিকেজি মিষ্টি-নিমকি ২৫০-২৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এ ব্যবসা করেই নিজাম উদ্দিন প্রতি সপ্তাহে ৩-৪ হাজার টাকা আয় করেন। এ ব্যবসা থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়েই তিনি সংসারের ভরণপোষণসহ সব কাজ করেন।
মো. রফিকুল ইসলাম, করেসপন্ডেন্ট, জাগো২৪.নেট, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) 

























