রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অন্ধ মশিউর আলো ছড়াচ্ছেন কুরআনের

তোফায়েল হোসেন জাকির: দৃষ্টিহীন মশিউর রহমান লিমন। বয়স ৪০ উর্দ্ধে। শুনে-শুনে মুখস্থ করেছেন কুরআন। এখন সেই কুরআনের আলো ছড়িয়ে দিতে ছুটে চলেন বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে। ইতোমধ্যে শিক্ষা দিয়েছেন ৭০০ বেশি শিক্ষার্থীকে।  এভাবে দেড়যুগ ধরে কুরআনের আলো ছড়াচ্ছে অন্ধ হাফেজ মশিউর।   

সম্প্রতি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম (পঁচার বাজার) জামিয়াতুল হোসাইনিয়া মারকাজুল উলুম হাফিজিয়া কওমী মাদরাসা ও এতিমখানায় দেখা গেছে- এই হাফেজের কুরআন পাঠাদানের দৃশ্য।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মশিউর রহমান লিমন। চোখে না দেখলেও গত ২০০১ সালে একটি মাদরাসা শিক্ষকের কাছে কুরআন পাঠ শুনে শুনে হাফেজ হন তিনি।  তখন থেকে বিভিন্ন মাদরাসা ও গ্রামে গিয়ে কুরআন শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এ থেকে সামান্য কিছু হাদিয়া নিয়েই সংসার চলে তার ।

স্বজনরা জানায়, প্রত্যেক ভোর হওয়ার পরপরই মাদরাসার দিকে তড়িঘড়ি করে ছুটে যান অন্ধ  হাফেজ মশিউর রহমান লিমন। কখনো একা আবার কখনো বা কারো সাহায্য নিয়ে হেঁটে বের হন। এরপর মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের দেন কুরআনের শিক্ষা। তার তিন ছেলে, স্ত্রী ও তার মাকে নিয়ে ৬ সদস্যের পরিবার। এলাকার মানুষের কাছে অন্ধ হাফেজ নামে বেশ পরিচিত। এলাকায় যেকোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলে তাকে দাওয়াত করে ধর্মপ্রাণ মানুষ। সেই সাথে  বিনা পারিশ্রমীকে ইসলামী জলসায় কুরআনের আলো ছড়িয়ে দেন তিনি। কুরআন প্রচারের জন্য এলাকার মানুষের কাছে তার আগ্রহ  দৃষ্টান্ত। তার জীবন খুবই সংগ্রামী। খুব কষ্ট করে হেঁটে মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করান এই হাফেজ।

শিক্ষার্থী নাঈম ইসলাম বলেন, হুজুরের ক্লাশ করে অনেক ভালো লাগে। সেইসাথে কন্ঠ শুনে মুগ্ধ আমরা। বিশেষ করে তার আজান। তার মাধ্যমে শত শত ছাত্র কোরআন শিখেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা হামিদ মিয়া বলেন, মশিউর আমার বন্ধু। আমার চোখ থাকতেও আমি কুরআন পরতে জানি না, তবে সে জানে। সে অন্ধ হয়েও যেভাবে আখিরাতের জন্য কাজ করছে তা দেখে আমি অবাক হই। সে আমাদের গ্রামের অহংকার।

দৃষ্টিহীন হাফেজ মশিউর রহমান লিমন বলেন, যে ব্যক্তি  দুঃখকে জয় করতে পারবে তার কাছে আপনা-আপনি সুখ ধরা দিবে। আমি দুঃখকে জয় করেছি। এজন্যই তো বর্তমান সময়ের একটি মাদরাসা থেকে ৪ হাজার টাকার হাদিয়া নিয়েই পরিবার নিয়ে সুখে আছি।

দিনি আরও বলেন, মূলত শিক্ষার্থীদের কুরআন তিলোওয়াত শেখাই ও বিভিন্ন জলসায় ইসলামী কথা বলে থাকি। এসব করতে পেরে অনেক ভালো লাগে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কুরআনের শিক্ষা দিতে চাই।

সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান মাফু বলেন, সে অত্যান্ত শান্ত স্বভাবের লোক। অভাবের সাথে যুদ্ধ করেই চলতে হয় তাকে । পরিষদের পক্ষ থেকে সবসময় সহযোগীতা করা হয়।

জনপ্রিয়

অন্ধ মশিউর আলো ছড়াচ্ছেন কুরআনের

প্রকাশের সময়: ০৭:৫৬:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

তোফায়েল হোসেন জাকির: দৃষ্টিহীন মশিউর রহমান লিমন। বয়স ৪০ উর্দ্ধে। শুনে-শুনে মুখস্থ করেছেন কুরআন। এখন সেই কুরআনের আলো ছড়িয়ে দিতে ছুটে চলেন বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে। ইতোমধ্যে শিক্ষা দিয়েছেন ৭০০ বেশি শিক্ষার্থীকে।  এভাবে দেড়যুগ ধরে কুরআনের আলো ছড়াচ্ছে অন্ধ হাফেজ মশিউর।   

সম্প্রতি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম (পঁচার বাজার) জামিয়াতুল হোসাইনিয়া মারকাজুল উলুম হাফিজিয়া কওমী মাদরাসা ও এতিমখানায় দেখা গেছে- এই হাফেজের কুরআন পাঠাদানের দৃশ্য।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মশিউর রহমান লিমন। চোখে না দেখলেও গত ২০০১ সালে একটি মাদরাসা শিক্ষকের কাছে কুরআন পাঠ শুনে শুনে হাফেজ হন তিনি।  তখন থেকে বিভিন্ন মাদরাসা ও গ্রামে গিয়ে কুরআন শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এ থেকে সামান্য কিছু হাদিয়া নিয়েই সংসার চলে তার ।

স্বজনরা জানায়, প্রত্যেক ভোর হওয়ার পরপরই মাদরাসার দিকে তড়িঘড়ি করে ছুটে যান অন্ধ  হাফেজ মশিউর রহমান লিমন। কখনো একা আবার কখনো বা কারো সাহায্য নিয়ে হেঁটে বের হন। এরপর মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের দেন কুরআনের শিক্ষা। তার তিন ছেলে, স্ত্রী ও তার মাকে নিয়ে ৬ সদস্যের পরিবার। এলাকার মানুষের কাছে অন্ধ হাফেজ নামে বেশ পরিচিত। এলাকায় যেকোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলে তাকে দাওয়াত করে ধর্মপ্রাণ মানুষ। সেই সাথে  বিনা পারিশ্রমীকে ইসলামী জলসায় কুরআনের আলো ছড়িয়ে দেন তিনি। কুরআন প্রচারের জন্য এলাকার মানুষের কাছে তার আগ্রহ  দৃষ্টান্ত। তার জীবন খুবই সংগ্রামী। খুব কষ্ট করে হেঁটে মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করান এই হাফেজ।

শিক্ষার্থী নাঈম ইসলাম বলেন, হুজুরের ক্লাশ করে অনেক ভালো লাগে। সেইসাথে কন্ঠ শুনে মুগ্ধ আমরা। বিশেষ করে তার আজান। তার মাধ্যমে শত শত ছাত্র কোরআন শিখেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা হামিদ মিয়া বলেন, মশিউর আমার বন্ধু। আমার চোখ থাকতেও আমি কুরআন পরতে জানি না, তবে সে জানে। সে অন্ধ হয়েও যেভাবে আখিরাতের জন্য কাজ করছে তা দেখে আমি অবাক হই। সে আমাদের গ্রামের অহংকার।

দৃষ্টিহীন হাফেজ মশিউর রহমান লিমন বলেন, যে ব্যক্তি  দুঃখকে জয় করতে পারবে তার কাছে আপনা-আপনি সুখ ধরা দিবে। আমি দুঃখকে জয় করেছি। এজন্যই তো বর্তমান সময়ের একটি মাদরাসা থেকে ৪ হাজার টাকার হাদিয়া নিয়েই পরিবার নিয়ে সুখে আছি।

দিনি আরও বলেন, মূলত শিক্ষার্থীদের কুরআন তিলোওয়াত শেখাই ও বিভিন্ন জলসায় ইসলামী কথা বলে থাকি। এসব করতে পেরে অনেক ভালো লাগে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কুরআনের শিক্ষা দিতে চাই।

সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান মাফু বলেন, সে অত্যান্ত শান্ত স্বভাবের লোক। অভাবের সাথে যুদ্ধ করেই চলতে হয় তাকে । পরিষদের পক্ষ থেকে সবসময় সহযোগীতা করা হয়।