একটি মৃত্যুই যেন সব স্রোতকে ঐক্যবদ্ধ করলো
(আ স ম সাজ্জাদ হোসেন পল্টন)
একটি প্রিয় মুখ, প্রিয় মানুষ, প্রিয় সংগঠক। যিনি রংপুর জেলা সাবেক ছাত্রদল, যুবদলের অন্যতম নেতা ও বর্তমান জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু ভাই। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান থেকে চব্বিশের ৫ আগস্ট জেল-জুলুম হুলিয়া মাথায় নিয়ে তিনি ছিলেন সরব আর স্বতস্ফুর্ত জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রেরণার উৎস।
মুক্ত বাংলাদেশের তিনি ছিলেন সবার প্রিয় মুখ। রাজনীতিতে বিভেদ আর বিদ্বেষ যখন সবাইকে ছিন্নভিন্ন করে দেয় তখন লাকু ভাইয়ের আকস্মিক মৃত্যু আমাদেরকে মনে করে দেয় কি এক আত্নার বন্ধন। সেদিনের সেই উত্তাল ছাত্র নেতৃত্ব রংপুর জেলা কালেক্টরেট মাঠে কান্নাজড়িত কণ্ঠের আমাদের প্রিয় অভিভাবক জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজশাহী বিভাগীয় সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম রূপকার রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক জননেতা সামছুজ্জামান সামু ভাইয়ের কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রিয় সহকর্মীর স্মৃতিচারণ করছিলেন তখন যেনো মনে হল এ মৃত্যু আমাদের হৃদয়ের গভীরতাকে কতটা স্পর্শ করলো।
শুধু লাকু ভাই নয়, তাঁর পরিবার, আমরা কেউ একা নই। আমাদের রাজনৈতিক পথচলা যেন এক বীরত্বের স্বাক্ষী। আমরা যখন ফেসবুকসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় চোখ বুলাচ্ছিলাম তখন আমাদের আরেক প্রিয় মানুষ রংপুর কারমাইকেল কলেজের সাবেক জিএস, নব্বইয়ের অন্যতম সংগঠক শহিদুল ইসলাম মিজু ভাইয়ের আবেগঘন স্মৃতিচারণ আমাদের সবার চোখ ভিজে দিয়েছিল।
রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক, নব্বইয়ের আর এক যোদ্ধা কিভাবে তাঁর সহকর্মী সদস্য সচিব লাকু ভাইকে কাছে পেয়েছিলেন। তাঁর সেই হৃদয়গ্রাহী আকুতি আমাদের হৃদয়ে দাগ কেটেছে। মহনগর সদস্য সচিব মাহাফু্জ্জুন্নবী ডন ভাই, যুবনেতা নাজু ভাইসহ অনেকে মর্মস্পর্শী স্মৃতিচারণ করছিলেন। তখন মনে হল রংপুর শিল্পকলা একাডেমিতে তাঁতীদলের রংপুর সমাবেশে আমাদের প্রিয় লাকু ভাইয়ের সেই উক্তি- আমাদের ভিপি পল্টন ভাই নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের আমাদের সহযোদ্ধা। তিনি আমার কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ ভাইয়ের দিকে তাকালেন এবং বললেন পল্টন ভাইকে দেখে রাখবেন। তাঁর কত স্মৃতি আমাকে তাড়া করে। এই ছাত্রনেতাদের প্রায় সবার পদচারণায় মুখরিত ছিল আমার প্রিয় ক্যাম্পাস সাদুল্লাপুর ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়। তারা সবাই সেদিন আমার এবং আমাদের জাতীয়দাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলের পাশে দাঁড়িয়ে আমাদের এই কলেজের ছাত্র সংসদে আমাদের জিতিয়েছিলেন।
রংপুর শহরের কত প্রিয় মুখ কত স্মৃতি ওই শহরটাতে গেলে মনে হয় এটা আমার প্রিয় শহর। নেতাদের আতিথিয়তা এভাবে একজন প্রিয় মুখ অকালে হারাতে হবে তা কল্পনাও করি নাই। যেভাবে হারিয়েছি আরেক প্রিয় রইচ ভাইকে। রংপুর শহরে ঢুকলে আর হয়তো কোন দিন শোনা যাবে না লাকু ভাইয়ের কণ্ঠে পল্টন ভাই কেমন আছেন কিন্তু তাঁর মৃত্যুটা প্রমাণ করলো সাবেক ছাত্রনেতারা কতটা ঐক্যবদ্ধ। তাঁর জানাজায় জনতার ঢল প্রমাণ করলো তিনি কত জনপ্রিয় ছিলেন। এক সময় শুনতাম রংপুর শহরটা সাংগঠনিকভাবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দুর্গ। যত বিভেদ আর বিদ্বেষ থাকুক না কেন, এই মৃত্যু প্রমাণ করলো সাবেক ছাত্রনেতারা এক এবং অভিন্ন। এটাই আমাদের শক্তির উৎস।
লেখক- আ স ম সাজ্জাদ হোসেন পল্টন, সাবেক ভিপি ও নব্বই দশকের অন্যতম সংগঠক।
জাকির/জাগো২৪
আ স ম সাজ্জাদ হোসেন পল্টন 
























