রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রংপুরের ছেলে শাহরিয়ার, অগ্নি নির্বাপণে বীরত্বের অবদানে পেলেন রাষ্ট্রীয় পদক

অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধার কাজে বীরত্বপূর্ণ প্রদর্শনের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রীয় পদক পেলেন স্টেশন অফিসার শাহরিয়ার রহমান। এ বছর অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধার কাজে বীরত্বপূর্ণ প্রদর্শনে স্বীকৃতি হিসেবে ৪৪ জনসহ রাষ্ট্রীয় পদক পান। এরমধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পদকপ্রাপ্ত ১০ জনের মধ্যে তিনি একজন। গত ২১শে নভেম্বর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০২০-এর সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রীয় পদকে সম্মানিত করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়রে সুরক্ষা বিভাগের সচিব শহিদুজ্জামান। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৪শে আগস্ট ‘বাংলাদশে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স’ স্টেশন অফিসার হিসেবে যোগদান করেন শাহরিয়ার রহমান। এরপর শুরু হয় তার মানবসেবার জীবন।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চকবাজার চুরিহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন শাহরিয়ার। মসজিদের পাশের গলিতে তিনি পাম্প স্থাপন করে সহকর্মীদের নিয়ে আগুন নির্বাপণ কাজ শুরু করেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ভবনের নিচ তলার দোকানে প্রবেশ করে ২৪ জন মৃত ব্যক্তি উদ্ধার করেন। তার এ কর্মদক্ষতা ও বিচক্ষণতার কারণে আগুন পশ্চিম দিকে বৃদ্ধি হয়নি, যা ফায়ার সার্ভিসের সুনাম বৃদ্ধি করে। এরপর একই বছর মার্চ মাসে বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়। উক্ত আগুনে সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার মো. শাহরিয়ার রহমানের নেতৃতে স্কাই লিফট নিয়ে আগুনে গমন করেন। পরিচালক জুলফিকার রহমানের নির্দেশক্রমে স্টেশন অফিসার শাহরিয়ার রহমান ও ফায়ারম্যান ইউনুছ পিপিসহ ব্রিদিং অ্যাপারেটার্স পরিধান করে স্কাই লিফটের মাধ্যমে নবম তলায় জানালার কাচ ভেঙে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করেন। এরপর ফায়ারম্যান ইউনুছকে সঙ্গে নিয়ে অফেনসিভ ফায়ার ফাইটিং করেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলে ব্রন্টু গাড়ি থেকে ১টি লাইন ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর মো. আবুল কালাম আজাদসহ ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে আগুন নির্বাপণ করেন। আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণের পর অন্যদের সঙ্গে ১৪ জন মৃত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা করেন। এভাবে ফায়ার ফাইটিং এবং উদ্ধার কাজ করে দেশের মূল্যবান সম্পদসহ আটকে পড়া অনেক মানুষের জীবন বাঁচাতে সক্ষম হন।

এ ছাড়া ওই মাসেই ডিএনসিসি কাঁচাবাজার সংলগ্ন ৬ তলা ভবনের ৩য় তলায় আগুন লাগে। সেখানে প্রচুর ধোঁয়া দেখে ব্রিদিং অ্যাপারেটাস পরিধান করে ফায়ারম্যান বিষ্ণুপদ মিস্ত্রিসহ ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন। ভবনের ৩য় তলার দক্ষিণ পাশের দোকানের ১টি রুমের লক কাটার দিয়ে তালা খুলে আগুনের উৎস খুঁজে পান। এরপর চীনা বিশেষ পানিবাহী গাড়ি থেকে ১টি পানির লাইন নিয়ে অগ্নি নির্বাপণ কাজ শুরু করেন। ভবনের ৩য় তলার দক্ষিণ পাশের আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অধিকাংশ এলাকা আগুনের হাত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০২০ উপলক্ষে অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধার কাজে বীরত্বপূর্ণ প্রদর্শনের স্বীকৃতি হিসেবে ৪৪ জনকে রাষ্ট্রীয় পদক দেয়া হয়। এই ৪৪ জনের মধ্যে ১০ জন পেয়েছেন ‘বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পদক’ ১৫ জন পেয়েছেন ‘বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স (সেবা) পদক (নতুন), ১০ জন পেয়েছেন ‘প্র্রেসিডেন্ট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পদক’ এবং ৯ জন পেয়েছেন ‘প্রেসিডেন্ট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স (সেবা) পদক (নতুন)। তাদের মধ্যে শাহরিয়ার রহমান একজন। শাহরিয়ার রহমান বর্তমানে ঢাকায় সহকারী পরিচালকের দপ্তরে (এল আর শাখা) কর্মরত। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কাঞ্চনগাড়ী গ্রামে তার বাড়ি।

জনপ্রিয়

রংপুরের ছেলে শাহরিয়ার, অগ্নি নির্বাপণে বীরত্বের অবদানে পেলেন রাষ্ট্রীয় পদক

প্রকাশের সময়: ১০:৪৫:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২০

অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধার কাজে বীরত্বপূর্ণ প্রদর্শনের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রীয় পদক পেলেন স্টেশন অফিসার শাহরিয়ার রহমান। এ বছর অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধার কাজে বীরত্বপূর্ণ প্রদর্শনে স্বীকৃতি হিসেবে ৪৪ জনসহ রাষ্ট্রীয় পদক পান। এরমধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পদকপ্রাপ্ত ১০ জনের মধ্যে তিনি একজন। গত ২১শে নভেম্বর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০২০-এর সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রীয় পদকে সম্মানিত করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়রে সুরক্ষা বিভাগের সচিব শহিদুজ্জামান। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৪শে আগস্ট ‘বাংলাদশে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স’ স্টেশন অফিসার হিসেবে যোগদান করেন শাহরিয়ার রহমান। এরপর শুরু হয় তার মানবসেবার জীবন।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চকবাজার চুরিহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন শাহরিয়ার। মসজিদের পাশের গলিতে তিনি পাম্প স্থাপন করে সহকর্মীদের নিয়ে আগুন নির্বাপণ কাজ শুরু করেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ভবনের নিচ তলার দোকানে প্রবেশ করে ২৪ জন মৃত ব্যক্তি উদ্ধার করেন। তার এ কর্মদক্ষতা ও বিচক্ষণতার কারণে আগুন পশ্চিম দিকে বৃদ্ধি হয়নি, যা ফায়ার সার্ভিসের সুনাম বৃদ্ধি করে। এরপর একই বছর মার্চ মাসে বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়। উক্ত আগুনে সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার মো. শাহরিয়ার রহমানের নেতৃতে স্কাই লিফট নিয়ে আগুনে গমন করেন। পরিচালক জুলফিকার রহমানের নির্দেশক্রমে স্টেশন অফিসার শাহরিয়ার রহমান ও ফায়ারম্যান ইউনুছ পিপিসহ ব্রিদিং অ্যাপারেটার্স পরিধান করে স্কাই লিফটের মাধ্যমে নবম তলায় জানালার কাচ ভেঙে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করেন। এরপর ফায়ারম্যান ইউনুছকে সঙ্গে নিয়ে অফেনসিভ ফায়ার ফাইটিং করেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলে ব্রন্টু গাড়ি থেকে ১টি লাইন ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর মো. আবুল কালাম আজাদসহ ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে আগুন নির্বাপণ করেন। আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণের পর অন্যদের সঙ্গে ১৪ জন মৃত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা করেন। এভাবে ফায়ার ফাইটিং এবং উদ্ধার কাজ করে দেশের মূল্যবান সম্পদসহ আটকে পড়া অনেক মানুষের জীবন বাঁচাতে সক্ষম হন।

এ ছাড়া ওই মাসেই ডিএনসিসি কাঁচাবাজার সংলগ্ন ৬ তলা ভবনের ৩য় তলায় আগুন লাগে। সেখানে প্রচুর ধোঁয়া দেখে ব্রিদিং অ্যাপারেটাস পরিধান করে ফায়ারম্যান বিষ্ণুপদ মিস্ত্রিসহ ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন। ভবনের ৩য় তলার দক্ষিণ পাশের দোকানের ১টি রুমের লক কাটার দিয়ে তালা খুলে আগুনের উৎস খুঁজে পান। এরপর চীনা বিশেষ পানিবাহী গাড়ি থেকে ১টি পানির লাইন নিয়ে অগ্নি নির্বাপণ কাজ শুরু করেন। ভবনের ৩য় তলার দক্ষিণ পাশের আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অধিকাংশ এলাকা আগুনের হাত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০২০ উপলক্ষে অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধার কাজে বীরত্বপূর্ণ প্রদর্শনের স্বীকৃতি হিসেবে ৪৪ জনকে রাষ্ট্রীয় পদক দেয়া হয়। এই ৪৪ জনের মধ্যে ১০ জন পেয়েছেন ‘বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পদক’ ১৫ জন পেয়েছেন ‘বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স (সেবা) পদক (নতুন), ১০ জন পেয়েছেন ‘প্র্রেসিডেন্ট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পদক’ এবং ৯ জন পেয়েছেন ‘প্রেসিডেন্ট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স (সেবা) পদক (নতুন)। তাদের মধ্যে শাহরিয়ার রহমান একজন। শাহরিয়ার রহমান বর্তমানে ঢাকায় সহকারী পরিচালকের দপ্তরে (এল আর শাখা) কর্মরত। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কাঞ্চনগাড়ী গ্রামে তার বাড়ি।