শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৭ পূর্বাহ্ন

মোর ইসকায় কেউ চড়তে চায় না বাহে

তোফায়েল হোসেন জাকির
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২২

তোফায়েল হোসেন জাকিরঃ মুই ৩৯ বছর ধরি ইসকা চালাম। আগে ইসকাত ব্যাটারী আছিলো না। একন সবাই ব্যাটারী এ্যাওলা ইসকাত চরে। ট্যাকার অভাবে ব্যাটারী নাগাতে পাম নাই। কষ্ট ইসকার প্যাটেল মারি কামাই করার চেষ্টা করম। কিন্তু মুই বুড়া আর প্যাটেল চালানো কারনে মোর গাড়িত কেউ চড়তে চায় না বাহে। হামাক এ্যানা ব্যাটারীর কেনার ব্যবস্থা করি দেও বাবা!

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) এভাবে কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের শালাইপুর গ্রামের রিকশা চালক মনছুর আলী (৭৯)। যাত্রীর অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় বসে থাকতে তার দেখা হয় সাদুল্লাপুর শহরে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একদম ছিন্নমূল পরিবারের মুনছুর আলীর। স্ত্রী-ছেলে ও তিন মেয়েসহ ৬ সদস্যের সংসার। অন্ন-বস্ত্র যোগাতে তিন চাকার রিকশায় সহায় সম্বল তার। দীর্ঘ ৩৯ বছর ধরে হাতে হ্যান্ডেল আর পায়ে প্যাডেল মেরে রিকশা চালিয়ে কোনমোত জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন। কয়েক বছর আগে তার রিকশা রেখে নামাজে গেলে চুরি হয়ে যায় সেটি। ফলে থমকে যায় জীবনযুদ্ধ। এরই মধ্যে গাইবান্ধার এক চিকিৎসক কিনে দেন একটি রিকশা। তবে সেটি কোন ব্যাটারী চালিত নয়। তবুও জীবিকার তাগিদে পায়ে প্যাডেল মেরে যাত্রী বহনে অবিরত চালিয়ে আসছেন। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এই উপার্জনের টাকা দিয়ে তিন মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়। ছেলেটিও বিয়ে করে আলাদা হয়েছে। জায়গা জমি বলতে কিছুই নেই তার।

এখন স্ত্রীকে নিয়ে অন্যের ভূমিতে বসবাস। বৃদ্ধ বয়সেও নেই কোন অবসর। সকাল হলেই রিকশা নিয়ে বের হতে হয় তাকে। যাত্রী নিয়ে ছুটেন নানা দিক। এর পাশাপাশি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে ভুলেনি কখনো। তাকে রিকশা নিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন রাস্তা-ঘাটেয়। তবে যাত্রী উঠে কম। কারণ, বার্ধক্য বয়স আর প্যাডেল চালিত রিকশা। তাই যাত্রীরা উঠতে অনাগ্রহী। খুব মিনতি করে যাত্রী তুলে নেন এই বৃদ্ধ মনুছুর আলী। এভাবে দিন শেষে যেটুকু উপার্জন হয় তা দিয়ে কোনমেতা চলছে জীবিকা। যেনো নুন আন্তে পান্তা ফুরায় অবস্থা তার।  শেষ বয়সেও মুনছুর আলী তপ্ত রোদ আর শীত-বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে রোজগারের আশায় রিকশা নিয়ে ছুটে চলা তার।

এই রিকশা চালক মনছুর আলী জানান, একদম ভূমিহীন ব্যক্তি তিনি। বয়সও  এখন বার্ধক্য। ঝুঁকিপুর্ণ ঘরে বসবাস। সীমিত আয়-রোজগারে স্ত্রীকে নিয়ে কোনভাবে বেঁচে আছেন।

তিনি আরও বলেন, বুড়ো হওয়ার কারণে  আমার রিকশায় কেউ উঠতে চায় না। তারপরও রিকশাটি যদি ব্যাটারী-চার্জার চালিত হতো, তাহলে হয়তো কিছু যাত্রী পাওয়া যেতো। কিন্তু টাকার অভাবে গাড়ীতে ব্যাটারী লাগাতে পারছি না।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মজনু মিয়া জানান, মুনছুর আলী যে বয়সে  অবসর সময় কাটানোর কথা, সেখানে রিকশার প্যাডেল চালিয়ে অবিরাম ছুটে চলছেন রাস্তা-ঘাটে। ব্যাটারীবিহীন এ রিকশায় যাত্রী নিয়ে  চলতে কষ্ট হলেও তবুও জীবিকার তাগিদে ছুটছেন এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তরে। পথচলা কঠিন হলেও পৃথিবীতে থেমে থাকার লড়াইয়ে থেমে নেই এই বৃদ্ধের ।

সাদুল্লাপুর উপজেলা নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) শাখার সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, এই বৃদ্ধ চাচাকে প্রায়ই রিকশা নিয়ে ঘুরতে দেখি। কিন্তু কোন যাত্রী তার রিকশায় উঠতে চায় না। প্যাডেল চালিত রিকশা ও বয়স্ক বলে যাত্রীরা নারাজ।  তবে তাকে সরকারি-বেসরকারিভাবে সহযোহিতা করা দরকার।

সাদুল্লাপুর উপজেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ,স, ম সাজ্জাদ হোসেন পল্টন বলেন, বিভিন্ন রাস্তা-ঘাটে মুনছুর চাচার সঙ্গে দেখা হয়। জীবিকার সন্ধানে বার্ধক্য বয়সেও তাকে রিকশা চালাতে হচ্ছে। রিকশাটি ব্যাটারী চালিত হলে ভালো হতো।

 

 

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | জাগো২৪.নেট

কারিগরি সহায়তায় : শাহরিয়ার হোসাইন