শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:৫১ অপরাহ্ন

তিন অদম্য মেধাবীর গল্প

মাসুদ রানা, করেসপন্ডেন্ট, জাগো২৪.নেট, পাবনা
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত নাড়িয়াগোদাই উচ্চবিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় বিদ্যালয়টি থেকে ২৪ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে তিন শিক্ষার্থী অতিদরিদ্র পরিবারের সদস্য।
তাদের কেউ শ্রমিকের কাজ, কেউবা অন্যের বাড়িতে কাজ করে, আবার কেউ টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করেছে। এমন কঠিন সংগ্রামের মধ্যেও তারা লক্ষ্য পূরণে পিছপা হয়নি। এই তিন শিক্ষার্থী হলো উপজেলা পাইকশা গ্রামের সাথী খাতুন, জিহাদ হোসেন ও রুদ্রগাতী গ্রামের মো. মোস্তাকিন।
সাথী খাতুনের বাবা শামসুল মোল্লা পেশায় দিনমজুর। তাঁর একার আয়ে সংসার চলে না। তাই সাথী খাতুনের মা সাফিয়া খাতুন অন্যের বাড়িতে গৃহস্থালি কাজ করেন। সংসারের বাড়তি আয় ও নিজের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য সাথীও মায়ের সঙ্গে কাজ করত।
পড়াশোনার ফাঁকে সে কখনো জমি থেকে তোলা পেঁয়াজ কেটে পরিষ্কার করেছে, কখনো ধান সেদ্ধ করেছে। আবার কখনো থালা-বাসন ধোয়াসহ গৃহস্থালি নানা কাজকর্ম করেছে। তবে কাজের চাপে কখনো পড়াশোনায় ফাঁকি দেয়নি সাথী। এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।
সাথীর বাবা শামসুল মোল্লা বলেন, তিনি পড়াশোনা তেমন জানেন না। সাথীকে পড়াশোনা করানোর মতো সামর্থ্যও তাঁর নেই। তবে সাথীর ইচ্ছা, সে চিকিৎসক হয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু মেয়েকে কলেজে ভর্তি করাতে পারবেন কি না, সেটা নিয়ে দ্বিধায় আছেন তিনি।
শ্রমিকের কাজ করেছে জিহাদ। জিহাদের বাবা মো. জাহাঙ্গীর দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁর পক্ষে ছেলে জিহাদের পড়াশোনার খরচ দেওয়া তো দূরের কথা, সংসার চালানোই সম্ভব হচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে জিহাদ বাবার সঙ্গে অন্যের জমিতে কৃষিশ্রমিকের কাজ করে। নিজের আয়ের একটি অংশ বাবার হাতে তুলে দেয় জিহাদ। অবশিষ্ট টাকায় সে নিজের পড়াশোনার খরচ দিয়েছে। সব বাধা জয় করে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে জিহাদ।
জিহাদ বলে, কাজের জন্য নিয়মিত স্কুলে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তবে সে বাড়িতে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে গেছে। বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চায় সে। তবে অভাবের সংসারে কত দূর পড়াশোনা করতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে তার।
সংসারের হাল ধরেও সফল মোস্তাকিন।  মোস্তাকিন যখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র, তখন তার মা মারা যান। বাবা একসময় দৈনিক মজুরিতে কৃষিশ্রমিকের কাজ করতেন। তবে অসুস্থতা ও বার্ধক্যের কারণে মোস্তাকিনের বাবা এখন নিয়মিতভাবে কাজও করতে পারেন না। তাই সংসার চালানোর দায়িত্ব মোস্তাকিনের কাঁধেই। কখনো সে বাবার মতো কৃষিশ্রমিকের কাজ করেছে, আবার কখনো টিউশনি করে সংসারের খরচ জোগাড় করেছে। এই আয় দিয়েই সে নিজের পড়াশোনারও দায়িত্ব নিয়েছে। এত কিছুর মধ্যেও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি মোস্তাকিন। সে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
নাড়িয়াগোদাই উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল হান্নান বলেন, ‘আমার স্কুলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই হতদরিদ্র। এরপরও এই স্কুল থেকে ২৪ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে সাথী, জিহাদ ও মোস্তাকিন অনেক কষ্ট করেছে। সমাজের বিত্তবানদের কিছুটা সহযোগিতা পেলে তারা আরও অনেক দূর যেতে পারবে।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | জাগো২৪.নেট

কারিগরি সহায়তায় : শাহরিয়ার হোসাইন