গাইবান্ধার ফুলছড়ির উপজেলাধীন অবস্থিত দক্ষিণ বুড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাঠদানের জন্য রয়েছে একটি দোচালা টিনের ঘর। মাত্র ১২ হাতে ঘরটিতে তিনটি রুম। এসব রুমে ২০০ শিক্ষার্থীর পাঠদান। গাদাগাদি করে পড়তে হয় শিশুদের। যে লেখাপড়ার মত কোন পরিবেশ নেই। দেখে মনেই হবে না এটি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর ঘরের সামনে দাঁড়ানো জায়গা নেই রাস্তা ছাড়া। যার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পাঠগ্রহণে অমনোযোগি হচ্ছে।
সম্প্রতি দেখা যায় বিদ্যালয়টি এই চিত্র। তবে ভবন নির্মাণের জন্য দেখা গেছে কয়েকটি পিলার। এরপর কাজ বন্ধ করেছে ঠিকাদার।
জানা যায়, স্কুলটির ভবন নির্মানে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে এলজিইডির অধীনে অবকাঠামোগত দক্ষতা উন্নয়ন ও তথ্যের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ন জনগোষ্ঠির সহনশীলতা বৃদ্ধি (প্রভাতী) প্রকল্পে মাধ্যমে কাজের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কাজটি পায় ঢাকার সোনার গায়ের শামীম আহম্মেদ মন্ডল নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠান স্থানীয় ঠিকদার কাদের ভূইয়া আকাশের সাথে কাজ সম্পাদনের চুক্তি করেন। স্কুলটির ভবনের কাজ কাজ শুরু হয় ২০ ডিসেম্বর ২০২১ সালে। আর ভবনটি কাজ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরে ১৯ জুন। ১৫ মাসেও স্কুলের ভবনটির কাজ এখনও ৩০ ভাগ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। ডিজাইনের সাথে স্পেসিফিকেশন মিল না থাকার কারন দেখিয়ে দেড় মাস থেকে ভবনের কাজ করে বন্ধ করে দিয়েছেন ঠিকাদার। কবে ভবনের কাজ শেষ হবে তা নিয়ে শংঙ্কিত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অবিভাবকরা।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুইটি আকতার বলেন, স্কুলের জায়গায় নতুন ভবন কাজ শুরু সময় থেকে এই টিন সেডের ঘরে আমাদের ক্লাস হচ্ছে। ছোট একটু ঘরে তিনটি রুম। রুমগুলো ৪ হাত করে। স্যার-ম্যাডাম ক্লাসে গেলে সবাই আমরা বেঞ্চে বসতে পাই না। অন্য রুম থেকে শব্দ আসে। পড়ার মনোযোগ হারিয়ে যায়।
আরেক শিক্ষার্থী রিফা খাতুন বলেন, স্যারেরা বলছিলো আগামী জুনের মধ্য কাজ শেষ হবে। কাজ শুরু অনেক দিন হয়ে গেলেও এখনও মাটির নিচেই কাজ পড়ে আছে। রুম না থাকার কারনে আমাদের পড়াশুনা হচ্ছে না।
চতুর্থ শ্রেণির সৈকত মিয়া বলেন, আগে যেভাবে আছিলো, তখই ভালো ছিলো। নতুন ভবন করতে গিয়ে রুমে কারনে আমাদের পাঠদান সঠিকভাবে হচ্ছে না। একদিকে রুমের মধ্যই চিল্লাচিল্লি অন্য দিকে রাস্তার উপর দিয়ে সব সময় অটো,মোটরসাইকেল, ট্রাকটর যায়। শব্দে কারনে পড়াশুনা হচ্ছে না। স্কুলেই এলেই অস্বস্তি অস্বিস্তি লাগে।
অবিভাবক লিপি রানী বলেন, স্কুলের ঘর নেই। ধুলা-বালু, ছোট তিনটি রুম। সেজন্য সন্তানেরা স্কুলে আসতে চায় না। স্কুল ভাঙা চুড়ার কারনে বাচ্ছা স্কুলে আসতে চায় না। স্কুল থেকে যেয়ে প্রত্যকদিন শুধু বলে মা মাথা ধরছে। বাচ্ছাকে জোর করে আমরা স্কুলে পাঠাই।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শ্রী মমতা রানী বলেন, নতুন ভবনের জন্য স্কুলের জায়গা ছেড়ে দিয়েছি। ভবনের কাজ অনেক আগে শুরু হলেই এখনও পিলার ছাড়া কিছুই হয়নি। ভবন না থাকার কারনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিয়ে চিন্তায় আছি। কয়েক হাত একটি ঘরের তিনটি রুম করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছি। রুমের কারনে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে না।
আরেক সহকারী শিক্ষক আব্দুস সোবাহান বলেন, এক বছরেও বেশী সময় ধরে এই ছোট একটি টিন সেড রুমে ক্লাস নিচ্ছি। শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা দিতে পারছি না। জায়গা সংকটের কারনে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসে না । স্কুলে আসার জন্য তাদের চাপও দেয়া যাচ্ছে না। এতো গুলো শিক্ষার্থীদের আমরা বসার জায়গায়ও দিতে পারছি। ক্লাসে ঢুকেও ভয় হয়। রাস্তার সাথেই টিন সেট ঘরে পাঠদান দিচ্ছি।
স্কুলের সভাপতি শ্রী অনিল কুমার বর্মন বলেন, স্কুলটির ভবনের জন্য আমরা জায়গা ছেড়ে দিয়েছি। ১৫ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও কাজটি একটি দৃশ্যমান হয়নি। এখানে ঠিকাদারের না ইঞ্জিয়ারের গাফিলাতি কিছু বুঝতে পারছি না। কাজটি আবার গত ২২ দিন থেকে বন্ধ করে রেখেছেন ঠিকাদার। এই বিষয়ে এলজিইডির নির্বাহীকে বার বার অবগত করার পরও কোন সূরাহা পাচ্ছি না।
প্রধান শিক্ষক শামসুজোহা মিয়া প্রধান বলেন, স্কুলের ভবন হলে ক্লাস রুমের সংকট কাটবে। এ ভেবে আমরা স্কুলের জায়গা ছেড়ে দিয়ে একটি ১২ হাত দোচালা টিনে ঘর করি। শিক্ষার্থীদের যাতে পড়াশুনা ক্ষতি না হয়। ভবন নির্মানের ঠিকাদার শুরু থেকেই ধীর গতিতে কাজ করতে থাকে। ঠিকাদার আবার বেশ কিছু দিন থেকে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন গরমের সময় শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচেও পাঠদান করাতে পারছি। সামনে বর্ষা এলে কিভাবে পাঠদান দিব। সেই চিন্তায় মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থে আছি শিক্ষকরা। কাজটি দ্রুত সম্পূর্ন করার জন্য জেলা-উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিসে বার বার ধরনা দিয়ে কোন অগ্রগতি হয়নি। আর কবে নাগাত এই ভবনের কাজ শেষ হবে তারও কোন নিশ্চিয়তা পাচ্ছি না।
এবিষয়ে ঠিকাদার কাদের ভুইয়া আকাশ বলেন, কাজের ডিজাইনের সাথে স্পেসিফিকেশন মিল না থাকার বিষয়টি আমি এলজিইডির নির্বাহীকে বহুবার বলছি। ওনি ঠিক করে দেননি। আমি লোকসান করে কি কাজ করবো। এজন্য কাজটি করতে দেরি হচ্ছে।
গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী মো. ছাবিউল ইসলাম বলেন, কাজটি দ্রুত সময়ে শেষ করার জন্য আমি ঠিকাদারকে বলছি। তার পরও বাজারে জিনিস পত্রের দাম অনেক বেশী। এজন্য ঠিকাদার কাজটি দ্রুত করতে পারছে না। যতদুর সমম্ভব দ্রুত শেষ করা যায়।
© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | জাগো২৪.নেট