মো. রফিকুল ইসলাম: দেশজুড়ে খ্যাতি দিনাজপুরের চাল ও লিচুর। জেলার ব্র্যান্ডিংও করা হয়েছে চাল ও লিচু দিয়েই। এ জেলার তৈরি করা প্রশাসনের লোগোর স্লোগান ‘চাল-লিচুতে ভরপুর, জেলার নাম দিনাজপুর। এবছর লিচুর গাছে গাছে মুকুলের ব্যাপক সমারোহ। এ কারণে লিচুর ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা।
এ পর্যন্ত আবহাওয়া উপযোগী থাকায় স্বস্তিতে রয়েছেন বাগান মালিক ও লিচু চাষিরা। দেশখ্যাত দিনাজপুরের লিচু বাগানগুলো এখন ম-ম গন্ধে মুখরিত। শত শত মৌ-খামারি লিচুর মুকুল থেকে সুস্বাদু ও মিষ্টি মধু মৌমাছির মাধ্যমে আহরণ করছেন। এতে লিচুর বাগান মালিক ও মৌচাষি উভয় লাভবান হচ্ছেন। দিনাজপুরে সহস্রাধিক মৌ-খামারি লিচু বাগানগুলোতে অবস্থান করছেন। লিচুর মুকুল থেকে বর্তমান বাজারমূল্যে অন্তত ১০০ কোটি টাকার মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে জানান এসব মৌ-খামারিরা। লিচু গাছে প্রচুর ফুল থাকায় মধু উৎপাদন রেকর্ড ছুঁতে পারে। উৎপাদিত মধু দেশের অর্থনীতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবছর জেলায় ৫ হাজার ৭৮৭ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ করা হয়েছে এবং ৫ হাজার ৪১৮টি
লিচু বাগান রয়েছে। আরো জানা গেছে, জেলায় বর্তমানে অন্তত ১১০০ মৌ-খামারি লিচু বাগানগুলোতে অবস্থান করছেন। চিরিরবন্দর উপজেলার মাদারগঞ্জ, খানসামার কাচিনীয়া, সনকা, বীরগঞ্জের গোপালগঞ্জ, পার্বতীপুরের আমবাড়ি, সদরের মাশিমপুর, কিষাণ বাজার, শেখপুরা, উলিপুর, পাঁচবাড়ী, বিরলের মাধববাটি, ঝুকুরঝাড়ি, কাশিডাঙ্গা ও ফুলবাড়ী উপজেলায় লিচু বাগানগুলোতে চলছে মধু উৎপাদনের উৎসব।
এবছর গাছে প্রচুর লিচুর মুকুল আসায় দিনাজপুরে খামার স্থাপনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নাটোর, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা খামারিরা অন্তত ৯ হাজার মৌ-বাক্স স্থাপন করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে প্রতিটি বাক্স থেকে গড়ে ১৫-২০ কেজি লিচুর মধু উৎপাদন সম্ভব। সে হিসেবে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার টন মধু উৎপাদন হতে পারে। যার বর্তমান বাজারমূল্য অন্তত ১০০ কোটি টাকা। লিচুর মধু পাইকারি বাজারে প্রতিমণ সাড়ে ১২ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ লিচু মধুর বৈশিষ্ট্যমন্ডিত সু-ঘ্রাণ, আকর্ষণীয় রঙ আর অতুলনীয় স্বাদ বিদ্যমান থাকায় লিচু মধুর আলাদা কদর রয়েছে দেশজুড়ে। বর্তমানে দেশের বাইরেও কদর বৃদ্ধি পাচ্ছে লিচু মধুর। এসব তথ্য জানিয়ে দিনাজপুরের লিচু মধুর জিআই দাবি করেছেন উত্তরবঙ্গ মৌচাষি সমিতির সদস্য ও সফল মৌচাষি মোসাদ্দেক হোসেন।
দিনাজপুর সদরের আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মাশিমপুর এলাকায় লিচু বাগানে ১০০ মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু আহরণ করছেন মোসাদ্দেক হোসেন। মাস্টার্স পাশ করে চাকুরির পিছনে না ছুঁটে মৌ-খামার গড়ে মধু উৎপাদনে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেন এবং স্বল্প সময়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি। মৌচাষি মোসাদ্দেক হোসেন আরও জানান, জেলায় যে পরিমাণ লিচু বাগান আছে, এটা যদি সুশৃঙ্খলভাবে গাণিতিক আকারে পরিচালনা এবং মৌ-খামারিদের সেভাবে বিন্যস্ত করা যায় তাহলে দিনাজপুর থেকে হাজার কোটি টাকার মধু আহরণের সম্ভাবনা রয়েছে।
দিনাজপুরে লিচু মধু উৎপাদনে আসা সিরাজগঞ্জের মৌচাষি শিশির সাহা জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অসময়ের বৃষ্টির জন্য বেশির ভাগ মৌ-খামারই এবছর দিনাজপুরে এসেছে। দিনাজপুরে মৌ-বাক্সে মধু উৎপাদন সন্তোষজনক। আবহাওয়া, ঝড়-বৃষ্টির বা প্রখর রোদে না পড়লে ব্যাপক ফুল থাকায় মধু উৎপাদন রেকর্ড ছুঁতে পারে। মৌচাষিরা এখন লিচু বাগানে বিভিন্ন আকৃতির মৌমাছির বাক্স বসিয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহ শুরু করেছেন।
দিনাজপুর ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের (বিসিক) উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাহেদুল ইসলাম জাগো২৪.নেট-কে জানান, লিচু বাগানে মৌচাষ করে মৌচাষিরা যেমন লাভবান হন, মৌমাছির মাধ্যমে মুকুলে মুকুলে পরাগায়ণ ঘটার কারণে লিচুর ফলনও শতকরা ২৫ ভাগ বৃদ্ধি পায়। ফলে বাগানি ও মৌচাষি লাভবান হবেন। এতে বেকারত্ব যেমন দূর হচ্ছে, তেমনি লিচুর ফলনও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | জাগো২৪.নেট