নিভৃত গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা খন্দকার তৌফিকুর রহমান সোহাগ (৪৫)। ছাত্রজীবনে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স শেষে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেলিন। এরই মধ্যে সেই চাকরি ছেড়ে গড়ে তুলেছেন পিকিং জাতের হাসেঁর খামার। ইতোমধ্যে এই খামার করে মানুষকে তাক লাগিছেন তিনি।
সম্প্রতি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিণ দূর্গাপুরের সাতবিল নামকস্থানে দেখা গেছে- এই হাসেঁর খামার। সেখানে হাঁসগুলোর যত্নে ব্যস্ত ওই উদ্যোক্তা।
খন্দকার তৌফিকুর রহমান সোহাগ উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের কিশামত শেরপুর গ্রামের খন্দকার আবু তৈয়বের ছেলে।
জানা যায়, সোহাগ এক সময় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছিলেন। এরপর নিজেকে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্ন থেকে ২০২০ সালে চাকুরি ছেড়ে বাড়িতে ফিরেন। পরবর্তীতে বাড়ির পাশে সাতবিল নামকস্থানে নিজস্ব ১১ বিঘা জমিতে পুকুর বানিয়ে মাছচাষ শুরু করেন। এ থেকে অনেকটাই লাভবান হন তিনি। এরই একপর্যায়ে চলতি বছরে মাংস উৎপাদনের জন্য শুরু করেন পিকিং জাতের হাঁস পালন। উন্মুক্ত জলাশয়ে না, এসব হাঁস আবদ্ধ মাচা পদ্ধতিতে পালন করা হচ্ছে। প্রথমে সাড়ে ৩০০ বাচ্চা পালন করে ৬৫ হাজার টাকা খরচ বাদে লাভ দাঁড়িয়েছে তার ৩০ হাজার টাকা। মাত্র ৪৫ দিন পালনের পর মাংস উৎপাদনের জন্য এসব হাঁস বিক্রি করেন। এরপর থেকে আর কখনো পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। উৎপাদিত হাঁস বিক্রির লাভের টাকা দিয়ে দিব্বি চলছে তার সংসার। ইতোমধ্যে মানুষের মাঝে প্রিয় হয়ে উঠেছে এই হাসেঁর মাংস।
খামারটি দেখতে আসা আজগর আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, পুকুর-খাল-বিলের পানিতে হাঁস পালন দেখেছি কিন্তু ঘরের মাচায় হাঁস পালন করা যায় তা কখনো দেখিনি। এই প্রথম সোহাগ ভাইয়ের খামার দেখে অনেকটা মুগ্ধ। এর মাংসও বেশ স্বাদযুক্ত। আমিও চিন্তা করছি এমন একটি খামার করতে।
স্থানীয় এক কলেজ অধ্যক্ষ আমিরুল মোমিনিন সাগর বলেন, উদ্যোক্তা সোহাগ খন্দকার উন্নত জাতের হাঁস পালনে আর্থিতভাবে লাভবান হওয়ায় অনেকে উৎসাহিত হচ্ছে। পোল্ট্রি শিল্পে পিকিং হাঁস পালন খুলে দিতে পারে অপার সম্ভাবনার দুয়ার।
উদ্যোক্তা খন্দকার তৌফিকুর রহমান সোহাগ জানান, অন্য এক খামারীকে অনুসরণ করে গড়ে তুলেছেন উন্নত পিকিং জাতের সাদা হাঁস পালন। আবদ্ধ মাচায় খামারটি। বাচ্চা তোলা থেকে ৪৫ দিন পর প্রত্যেকটি হাঁসের ওজন হয় তিন থেকে থেকে পাঁচ কেজি। এখানে স্বল্প সময় ও কম খরচে অধিক লাভ করছে চলেছেন।
তিনি আরও বলেন, কঠোর পরিশ্রম আর দৃঢ় মনোবল নিয়ে খামারটি পরিচালনা করছি। পাশাপাশি মাছচাষও হচ্ছে। বর্তমানে হাঁসের খাবার, ওষুধ, শ্রমিক অন্যান্য খরচ বাদে মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা লাভ থাকছে। এ থেকে নিজে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকজনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি।
সাদুল্লাপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটরিনারী সার্জন ডা. আব্দুল্লাহেল কাফী বলেন, যে কোন কাজ পরিকল্পিভাবে করলে অবশ্যই সফল হওয়া সম্ভব। এ উপজেলায় পিকিং জাতের হাঁসের খামার আর কোথাও নেই। উদ্যোক্তা সোহাগের খামারে গিয়ে পরামর্শ প্রদান করা হবে। যাতে তিনি আরও লাভবান হন সে ব্যাপারে সহযোগিতা থাকবে।
© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | জাগো২৪.নেট