সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুয়াশাভেদ করে জীবিকার লড়াই

কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশার দাপটে বিপর্যস্ত দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের খেটে খাওয়া মানুষ। সূর্যের দেখা মিললেও শীত যেন সারাদিনই তাঁদের তাড়া করে ফেরে। তীব্র শীতের কামড়ে হাত-পা ঝিনঝিন করে ওঠে। তার ওপর হালকা বাতাস শীতের তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু জীবন তো থেমে নেই। পেটের তাগিদ আর সংসারেন দায়িত্ব মাথায় নিয়ে নিত্যদিন খেটে খাওয়া মানুষেরা কাকডাকা ভোরে ঘন কুয়াশাভেদ করে কনকনে শীতকে সঙ্গী করেই ছুটে চলেছেন কাজের সন্ধানে। দিনের পর দিন এভাবেই তাঁরা লড়াই করে চলেছেন। শীত তাঁদের শরীর কাবু করতে পারে। কিন্তু মনের জোর কাবু করতে পারে না। এ যেন জীবনের অদম্য সংগ্রাম।

উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই ও নশরতপুর ইউনিয়নের নশরতপুর গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, এই শীতে শরীর থেকে শীতের পোশাক খুলতে ইচ্ছে করে না। সকালে সাইকেল চালিয়ে কাজে যেতে গিয়ে শীতের কামড় যেন শরীর কাবু করে ফেলে। ঘন কুয়াশাভেদ করে সাইকেল চালানোও খুবই কষ্টকর।

উপজেলার রানীরবন্দর বাসস্ট্যান্ডে রিকশাভ্যানচালক রবিউল ইসলাম ও সাদেক আলী জানান, শীতে এমনিতেই যাত্রী কম। তার ওপর কুয়াশায় একদম রাস্তাঘাট ফাঁকা। ভোরবেলা রাস্তায় কোনো মানুষ নাই। লোকজন না থাকার কারণে আমাদেরকে বাসস্ট্যান্ড যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়। ভাড়া না মারলে ঘরে চাউল আসবে কীভাবে, সংসারই বা চলবে কীভাবে?

রাজমিস্ত্রির কাজ করা মো. সফিকুল ইসলাম জানান, গত ক’দিন থেকেই শীত যেন হাড় ভেঙ্গে দিচ্ছে। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে কাজ করা প্রায় অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এভাবে কতদিন চলবে তা নিয়ে চিন্তায় আছি।

উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই গ্রামের দিনমজুর হারুন ও মামুদপুর গ্রামের শাহজাহান আলী বলেন, হামারগিলাক ইটভাটায় কাম করিতে খুব ভোরেই যাইতে হয়। ঠান্ডাত কাদায় হাত দিবার সময় মনে হয় শীত যেন হাড্ডির মধ্যে ঢুকে যাওচে। কাজ তো আর হারা বন্ধ করি রাখিবার পারি না। কাজ-কাম না করিলে সংসার চলিবে কেমন করি আর খামোইবা কী?

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা জানান, কুয়াশা আর শীত শুধু মানুষের জীবনকেই দুর্বিসহ করছে না। কৃষিতেও এর প্রভাব পড়েছে। বোরোধানের বীজতলায় যত্ন নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। চারার ক্ষতি এড়াগে বীজতলায় পানি ছিটিয়ে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে কুয়াশার ফোঁটা সরিয়ে ফসল বাঁচানো যায়।

জনপ্রিয়

কুয়াশাভেদ করে জীবিকার লড়াই

প্রকাশের সময়: ০৩:৩৬:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫

কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশার দাপটে বিপর্যস্ত দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের খেটে খাওয়া মানুষ। সূর্যের দেখা মিললেও শীত যেন সারাদিনই তাঁদের তাড়া করে ফেরে। তীব্র শীতের কামড়ে হাত-পা ঝিনঝিন করে ওঠে। তার ওপর হালকা বাতাস শীতের তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু জীবন তো থেমে নেই। পেটের তাগিদ আর সংসারেন দায়িত্ব মাথায় নিয়ে নিত্যদিন খেটে খাওয়া মানুষেরা কাকডাকা ভোরে ঘন কুয়াশাভেদ করে কনকনে শীতকে সঙ্গী করেই ছুটে চলেছেন কাজের সন্ধানে। দিনের পর দিন এভাবেই তাঁরা লড়াই করে চলেছেন। শীত তাঁদের শরীর কাবু করতে পারে। কিন্তু মনের জোর কাবু করতে পারে না। এ যেন জীবনের অদম্য সংগ্রাম।

উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই ও নশরতপুর ইউনিয়নের নশরতপুর গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, এই শীতে শরীর থেকে শীতের পোশাক খুলতে ইচ্ছে করে না। সকালে সাইকেল চালিয়ে কাজে যেতে গিয়ে শীতের কামড় যেন শরীর কাবু করে ফেলে। ঘন কুয়াশাভেদ করে সাইকেল চালানোও খুবই কষ্টকর।

উপজেলার রানীরবন্দর বাসস্ট্যান্ডে রিকশাভ্যানচালক রবিউল ইসলাম ও সাদেক আলী জানান, শীতে এমনিতেই যাত্রী কম। তার ওপর কুয়াশায় একদম রাস্তাঘাট ফাঁকা। ভোরবেলা রাস্তায় কোনো মানুষ নাই। লোকজন না থাকার কারণে আমাদেরকে বাসস্ট্যান্ড যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়। ভাড়া না মারলে ঘরে চাউল আসবে কীভাবে, সংসারই বা চলবে কীভাবে?

রাজমিস্ত্রির কাজ করা মো. সফিকুল ইসলাম জানান, গত ক’দিন থেকেই শীত যেন হাড় ভেঙ্গে দিচ্ছে। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে কাজ করা প্রায় অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এভাবে কতদিন চলবে তা নিয়ে চিন্তায় আছি।

উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই গ্রামের দিনমজুর হারুন ও মামুদপুর গ্রামের শাহজাহান আলী বলেন, হামারগিলাক ইটভাটায় কাম করিতে খুব ভোরেই যাইতে হয়। ঠান্ডাত কাদায় হাত দিবার সময় মনে হয় শীত যেন হাড্ডির মধ্যে ঢুকে যাওচে। কাজ তো আর হারা বন্ধ করি রাখিবার পারি না। কাজ-কাম না করিলে সংসার চলিবে কেমন করি আর খামোইবা কী?

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা জানান, কুয়াশা আর শীত শুধু মানুষের জীবনকেই দুর্বিসহ করছে না। কৃষিতেও এর প্রভাব পড়েছে। বোরোধানের বীজতলায় যত্ন নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। চারার ক্ষতি এড়াগে বীজতলায় পানি ছিটিয়ে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে কুয়াশার ফোঁটা সরিয়ে ফসল বাঁচানো যায়।