বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২১ অপরাহ্ন

মায়ের কাগজের ফুলদানি দেখে বিশ্বকাপ ট্রফি বানালো পাবনার স্কুলছাত্র সাকিব 

মাসুদ রানা, করেসপন্ডেন্ট, জাগো২৪.নেট, পাবনা
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২২
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই শুরু হতে যাচ্ছে কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের জমজমাট আসর। বিশ্বকাপ জ্বরে কাঁপছে পুরো বিশ্ব। খেলায় নিজ দেশের অংশগ্রহণ না থাকলেও ফুটবলপ্রেমী বাংলাদেশিরাও সেই উত্তেজনায় গাঁ ভাসিয়েছেন।
এবার ফুটবল উৎসবের উন্মাদনায় নিজ হাতে বিশ্বকাপের ট্রফির রেপ্লিকা তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে আর্জেন্টিনাভক্ত স্কুলছাত্র সাকিবুল ইসলাম সাকিব।
সাকিব পাবনার সুজানগরের নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তায়নুল ইসলাম ও গৃহিণী সালমা দম্পতির ছেলে। সে সুজানগর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তারা দুই ভাই ও এক বোন। বড় বোন তাসলিমা খাতুন রাজশাহী সরকারি কলেজে এমএসসিতে পড়াশুনা করছেন। মেঝ ভাই রাকিবুল ইসলাম রাকিব পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
জানা গেছে, মায়ের কাগজের তৈরি ফুলদানি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ইউটিউব থেকে সাহায্য নিয়ে কাগজ, আঠা, রঙ দিয়ে ট্রফিটি তৈরি করেছে। এটি তৈরি করতে তার এক বছরের মতো সময় লেগেছে। তার রেপ্লিকা ট্রফি দেখতে ছুটে আসছেন আশপাশের গ্রামের ফুটবলপ্রেমীরা।
সাকিবুল ইসলাম সাকিব জানায়, গত বছর কোপা আমেরিকা কাপের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর মায়ের হাতের কাগজ, কাঠ, কাপড় দিয়ে তৈরি ফুলদানি দেখে বিশ্বকাপ ফুটবল ট্রফি তৈরির ইচ্ছা জাগে। ইউটিউব থেকে ছবি ও নকশা সংগ্রহ করে স্কুলের পড়াশোনার পাশাপাশি বিশ্বকাপ ট্রফি তৈরি করি। এক পর্যায়ে সফল হলে এলাকায় হৈচৈ পড়ে যায়।
সাকিব আরও জানায়, সে একজন আর্জেন্টিনার সমর্থক। সে আশা করে এবার তার প্রিয় দল ট্রফি জিতবে। ট্রফিটি সত্যিকারের বিশ্বকাপ ট্রফির মতো দেখতে হওয়ায় খুবই খুশি সে।
সাকিবের বড় ভাই রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, মায়ের ফুলদানি দেখে বিশ্বকাপ ট্রফির রেপ্লিকা বানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করলে আমরা পরিবার থেকে তাকে উৎসাহ দেই। প্রথমে মনে করেছিলাম সে হয়ত এটি বানাতে পারবে না। এখন দেখি হুবহু একটি বিশ্বকাপ ট্রফি তৈরি করেছে। ট্রফি বানানোর শুরুর দিকে ঠিকঠাক গুছিয়ে উঠাতে না পেরে এক পর্যায়ে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে কাজ বন্ধ করে দেয়। তখন আমি তাকে ইউটিউব-ইন্টারনেটের সহযোগিতায় নকশা সংগ্রহ করে দেই। কঠোর পরিশ্রমে সে ট্রফির রেপ্লিকা তৈরিতে সফল হয়েছে। আমরা পরিবারের লোকজন তার জন্য গর্ববোধ করছি।
রাকিব আরও বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই ব্রাজিলের সাপোর্টার। সাকিব আর্জেন্টিনার সমর্থকদের নিয়ে ট্রফি হাতে মিছিল করে বেড়াচ্ছে। এ নিয়ে আমাদের দুই ভাইয়ের হাসি-তামাশা চলছে। আমি চাই বাংলাদেশ ফুটবল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করুক।
সাকিবের মা সালমা খাতুন বলেন, শখ করে কাগজ দিয়ে আমি একটি ফুলদানি তৈরি করি। আমার ছেলে দেখে বলল, আম্মু আমি একটি বিশ্বকাপ ট্রফি বানাতে চাই। আমি বলি তুমি যদি পারো তাহলে বানাও। এরপর সে বানিয়েছে। ভালো না হওয়ায় সে প্রথমবার ভেঙে ফেলে। পুনরায় আবার কাগজ দিয়ে বানানো শুরু করে। এক সপ্তাহ ধরে আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন মানুষ বাড়িতে ভিড় করছেন।
সাকিবের প্রতিবেশী আক্কাস আলী, শায়েন উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন জানান, সাকিবের তৈরি বিশ্বকাপ ট্রফি আমাদের এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। এটার জন্য পাড়ার মানুষদের মধ্যে এক ধরনের আনন্দ উৎসব চলছে। দূর-দূরান্তের মানুষ দেখতে আসছে। আমাদের খুবই আনন্দ হচ্ছে। যেন সত্যিকারের ফুটবল বিশ্বকাপ আমাদের গ্রামে চলে এসেছে।
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আপনার থেকেই আমি প্রথম শুনলাম। তার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।
পাবনা জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ছোট্ট ছেলেটি ইউটিউবের সহযোগিতায় বিশ্বকাপ ট্রফির রেপ্লিকা বানানোয় তাকে অনেক অনেক অভিনন্দন ও শুভকামনা জানাই।
আজ রোববার জেলা সমন্বয় মিটিং রয়েছে। সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে বিষয়টি আমরা দেখব। তাকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, সেটি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | জাগো২৪.নেট

কারিগরি সহায়তায় : শাহরিয়ার হোসাইন