গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ এলাকার মৃত দোলোয়ার হোসেনের ছেলে ফজলুল করিম। ফুলছড়ির দুর্গম চরে সম্মুখযুদ্ধে ১১ জন পাকিস্তানী সেনাকে হত্যার পর শহীদ হন তিনি। এ সময় সতীর্থরা তাকে দাফন করেছিলেন সেখানেই। বর্তমানে সেই কবর যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এরপর গত দুইবছর আগে সরকারিভাবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল করিমের বাড়িতে একটি প্রতীকি কবর স্থাপন করা হয়। তবে তার মা আছিরন বেগম এখনো জীবিত থাকলেও ওই প্রতীকি কবর ফলকে তাকে মুত দেখানো হয়েছে।
জানা যায়, সেই শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পুত্রের কবরের পাশে প্রতিদিন গিয়ে বসেন মা আছিরন বেগম। কিন্তু তিনি জানেন না কবরের নামফলকে তিনি মৃত হিসেবে ঘোষিত হয়ে আছেন। বিজয়ের ৫১ বছর পর পুত্রের কথা মনে করে গতকাল (১৬ ডিসেম্বর) অন্ধ মা আছিরন বেগম তার পুত্রের কবরের পাশে হুইলচেয়ারে বসে ছিলেন।
শহীদ ফজলুল করিমের ছোট ভাই আমিরুল ইসলাম জানান, মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরেও তার মা পথ চেয়ে বসে থাকতেন যুদ্ধে যাওয়া পুত্রের জন্য। স্বজনরা জানতেন, ফুলছড়ির দুর্গম চরে সম্মুখযুদ্ধে ১১ জন পাকিস্তানী সেনাকে হত্যার পর শহীদ হলে সতীর্থরা দাফন করেছিলেন তাকে সেখানেই। বর্তমানে সেই কবরও যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পুত্রের জন্য কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে যাওয়া মাকে কেউ জানায়নি মৃত্যুর সংবাদটি। কিন্তু গত দুইবছর আগে সরকারিভাবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর তৈরির সিদ্ধান্ত হলে ফজলুল করিমের বাড়িতে একটি প্রতীকি কবর স্থাপন করা হয়। শহীদমাতা আছিরন বেগম তখন থেকে প্রতিদিন নিয়মিত কবরের কাছে গিয়ে বসছেন। ছুঁয়ে দেখছেন প্রিয় সন্তানের কবরের রেলিং। বর্তমানে জেলায় একমাত্র বেঁচে থাকা শহিদের মা আছিরন বেগম কিন্তু এখনও জানেন না কবরের ফলকে তাকে মৃত হিসেবে দেখানো হয়েছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষলগ্নে ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কালাসোনার চরে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন জেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের পুনতাইড় গ্রামের কলেজছাত্র ফজলুল করিম। পরবর্তীতে সরকারি অনুদানসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা পেলেও পর্ণকুটিরেই বাস করেন শহীদমাতা আছিরন বেগম। সম্মুখসময়ে শহীদ হওয়ার সেই চরটিকে স্বাধীনতার পর ফজলুপুর ইউনিয়ন নামে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
বিজয়ের ৫১ বছর পর কেমন আছেন শহীদমাতা আছিরন বেগম। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে- আছিরন বেগম বসে আছেন ছেলের প্রতীকি কবরের পাশে। এসময় দেখা গেলো নামফলকে লেখা আছে “শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার সমাধি, নাম : শহীদ ফজলুল করিম, পিতার নাম : মৃত্যুঃ দেলোয়ার হোসেন, মাতার নাম : মৃত্যুঃ আছিরন বেগম, গ্রাম : পুনতাইড়, পোস্ট : মহিমাগঞ্জ, উপজেলা : গোবিন্দগঞ্জ, জেলা : গাইবান্ধা। সেক্টর নং- ১১, গেজেট নং- ৩৯১, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মায়ের নামের আগে মৃত্যু লেখার বিষয়ে অসংখ্য ভুলে ভরা ফলকের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে অভিযোগ করেছিলেন শহিদ ফজলুল করিমের ছোট ভাই আমিরুল ইসলাম। কিন্তু তিনি কোন পাত্তাই পাননি বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ঠিকাদার ছাড়া সংশ্লিষ্ট কেউ এখানে আসেননি কখনও।
এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফ হোসেন জানান, কবরে ভুল তথ্য লেখার বিষয়টি জানা ছিলোনা। খুব দ্রুত এটি সংশোধনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
করেসপন্ডেন্ট, জাগো২৪.নেট, গাইবান্ধা 
























