মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৬ অপরাহ্ন

নিমের গুনাগুন ও উপকারিতা

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২০

নিমের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম হচ্ছে Azadirachta indica, ইংরেজিতে নিম (Neem) বা ইন্ডিয়ান লাইলাক (Indian Lilec)। এটি একটি বহু বর্ষজীবি ও চিরহরিৎ বৃক্ষ। আকৃতিতে ৪০-৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক হতে প্রায় ১০ বছর সময় লাগে। এটি হচ্ছে সাধারণ নিম। এছাড়া আরও তিন প্রকার নিম আছে এ তিনটি হচ্ছে মহানিম বা ঘোড়ানিম যার উদ্ভিদতাত্বিক নাম  Melia azadirach এটি সাধারণ নিমের মত বহু গুণে গুণান্বিত নয়।  আর একটি হলো মিঠো নিম, এটি তেতো নয়, এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম হচ্ছে Azadirachta siamensis ‘অ্যাজাডিরাকটা সায়ামেনসিস’। এটি আমাদের  দেশের পাহাড়ি অঞ্চল, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে পাওয়া যায় এবং সবজি হিসেবেও এর বহুল ব্যবহার প্রচলিত। আরেকটি Azadirachta exelsir এটি বৃহৎকার এবং কাঠের জন্য বিখ্যাত, অপরটি হল Merya koyanji বা কারী পাতা হিসেবে আমরা যা ব্যবহার করি।
নিম গাছ সাধারণতঃ উষ্ণ আবহাওয়া প্রধান অঞ্চলে ভাল হয়। মাটির পিএইচ (pH) ৬.২ — ৮.৫ এবং বৃষ্টিপাত ১৮ – ৪৬ ইঞ্চি ও ১২০ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রা নিম গাছের জন্য উপকারী। এই গাছ বিভিন্ন প্রকার মাটিতে জন্মে, তবে বেলে দোঁয়াশ মাটিতে ভাল জন্মে, কংকরযুক্ত কাদা মাটিতেও জন্মে।
সংস্কৃত ভাষায় নিম গাছরে অস্তত্বি পাওয়া যায় ১০০০ এডি (AD) থেকে। ভারতবর্ষে রক্ষা লোক সাহিত্যের বর্ণনায় নিমগাছ দেশীয়  ঔষধ ও কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হত বহু প্রাচীন কাল থেকেই। অপর এক বর্ণনায় জানা যায় যে খ্রিস্টের জন্মেরও ৫০০০ বছর পূর্বে এই উপমহাদশে নিমের অস্তিত্ব ছিল এবং মানুষ এর বহুবিধ গুণাগুণের কথাও জানতো।

নিম তার বহুবিধ কীটনাশক ও জীবাণুনাশক রাসায়নিক অস্ত্র দিয়ে যেমন নিজেকে  রক্ষা করছে, তেমনি অন্যান্য গাছ-গাছড়া ও ফসলকে রক্ষা করছে ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গের কবল থেকে। মানুষ ও পশু-পাখিকে রক্ষা  করছে জীবাণু ও কীট-পতঙ্গের আক্রমণ থেকে। নিম মধ্যস্থ বেশির ভাগ যৌগগুলোই একটি প্রধান প্রাকৃতিক রাসায়নিক দ্রব্যের  শ্রেণীভুক্ত, যাদের ট্রাইটারপেনস (Triterpens) বা আরও সঠিকভাবে লিমোনোইডস (Limonoids) বলা হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত বারটি নিমোনোইডস যৌগ পৃথক করতে পেরেছেন। সেগুলো অনিষ্টকারী কীট-পতঙ্গের বৃদ্ধি রহিত করা এবং কৃষি, মানুষ ও পশু-পাখির বিভিন্ন আপদ ধ্বংস করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
ঔষধ ও প্রসাধনীতে নিমের ব্যবহার
নিমের ফল, বীজ, পাতা, ছাল, মূল বা শিকড় ইত্যাদি ঔষধ ও প্রসাধনীতে ব্যবহার হয়। নিমের উপাদান সাধারণভাবে এন্টিসেপটিক, এন্টিমাইক্রোবায়েলস। ইউরিনারী ডিজঅর্ডার, ডাইরিয়া, জ্বর, ব্রংকাইটিস, স্কিন ইনফেকশন, সেপটিকসোরস, ইনফেকটেড বার্ণস, হাইপার টেনশন এবং ইনফ্লেমেটারী ডিজিজেস এ ব্যবহার অন্যতম।
নিমের পাতার নির্যাস এবং নিম পাতার চা ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। নিমের এন্টি ম্যালেরিয়াল কার্যকারিতা আসে গেডুনিন ও লিমোনয়েড থেকে। নিমের পাতা প্রক্রিয়া করে নিম ক্যাপসুল ও ট্যাবলেট বয়স্কদের ডায়াবেটিস মেলাইটাস, নন কিটোনিক ডায়াবেটিস এবং ইনসুলিন ফাস্ট অথবা ইনসুলিন সেনসিটিভিটিতে ব্যবহার হয়।
সারা পৃথিবীতে বর্তমান নিম তেলের বার্ষিক চাহিদা ৮৩,০০০ মেঃ টনের মধ্যে শুধুমাত্র ভারত এর এক চতুর্থাংশ সাবান তৈরিতে ব্যবহার করে। প্রায় ডজনখানেক কোম্পানী বিভিন্ন ব্রান্ডের নীম সাবান উৎপাদনে জড়িত। গৃহপালিত পশুদের জন্য সাবান ও শ্যাম্পু  তৈরিতেও নিম তেল ব্যবহার হয়। এই সাবান টিকস্- ফিলাইস এবং লাইস বা উকুন নাশ করে থাকে। জার্মানীতে নিম তেল ব্যবহার হয় হেয়ার ওয়েল, হেয়ার টনিক এবং নেইল ওয়েল তৈরিতে।

দাঁত পরিষ্কার করার জন্য বাংলাদেশ, ভারত,  পাকিস্তান ও মায়ানমারের লক্ষ লক্ষ মানুষ নিমের ডাল ব্যবহার করে থাকে। দাঁত পরিষ্কার, মুখগহ্বর ও দাঁতের বিভিন্ন প্রকার রোগ নিরাময়ের জন্য নিমের টুথপেস্ট ও টুথপাউডার ব্যবহার হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। নিমের ছালের নির্যাস এককভাবে বা অন্য হার্বালের সাথে টুথপেস্ট ও মাউথওয়াস তৈরিতে ব্যবহার হয়। নিমের একোয়াস এক্সট্রাক্ট প্লেগ ফরমেশনের বিরুদ্ধে কার্যকরী বলে সাম্প্রতিককালে প্রমাণিত হয়েছে।

অন্যান্য মেডিসিনাল ও ভেটিরিনারীতে নিমের ব্যবহার নিয়ে দেশে বিদেশে গবেষণা চলছে। নিমের তেল ও নির্যাস অনেক থেরাপী চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। গবাদি পশুর খাদ্যের সাথে নিমের পাতা চুর্ণ ও নিম খৈল পরিমাণমত মিশিয়ে দিলে কৃমি মারা যায়। নিম তেল সমৃদ্ধ ক্রীম পশুর আঘাত জনিত স্থানে এবং মশা-মাছি বিতারণে ব্যবহার হয়।
কেনিয়াতে ড্রিডেড নিউকেসেল ভাইরাস থেকে মোরগ-মুরগী রক্ষায় নিমের ব্যবহার হচ্ছে। মোরগ-মুরগীর রোগ ব্যধি মহামারী আকার ধারণ করলে খাদ্য ও পানির সংঙ্গে নিম সিড পাউডার ও খৈল মিশিয়ে খাওয়ানোর ফলে মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।

 সংস্কৃতিতে নিম গাছকে ‘অ্যারিস্থা’ বলা হয়, যার অর্থ রোগ উপশমকারী। রোগ থেকে দূরে থাকার জন্য আমরা এশিয়াবাসীরা প্রাচীনকাল থেকেই নিমের সংঙ্গে মিতালী করেছি, এমনকি আমাদের পশু-পাখিদেরও নিমের সংঙ্গে  পরিচয় করিয়েছি। নিমের বিভিন্ন গুণাগুণের কারণে যে সব দেশে নিম গাছ ছিল না তারাও নিম গাছ লাগাতে শুরু করেছে যেমন আমেরিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি।  নিম নিয়ে বর্তমানে সর্বাধিক গবেষণা চলছে যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর জার্মানী, ভারত, কেনিয়া, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে (বিশেষ করে গত দু-তিন দশকে) নিম নিয়ে বিজ্ঞানীরা যেসব গবেষণা করেছেন তাতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে নিম ব্যবহারের পথ সুগম হয়েছে। ইতোমধ্যেই কিছু কিছু ঔষধের মেধাস্বত্তও (Patent) অনুমোদন হয়েছে।

বর্তমানে বিশ্বে নিমের এই যে এতো কদর তা কিন্তু এর অ্যান্টিসেপ্টিক গুণটিকে ঘিরেই শুরু হয়েছিল। নিম মধ্যস্থ বিভিন্ন যৌগগুলো অনেক ধরনের চর্মরোগ, সেপটিক সোর (Septic sore) এবং সংক্রামক পোড়া ক্ষতের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকর। ফোঁড়া, আলসার বা একজিমার চিকিৎসায় পাতায় কাথ (Decoction) বা পুলটিস (Poultice) অত্যন্ত ভালো কাজ দেয়। নিমের তেল গন্ডমালা রোগ (Scrofula), ইনডুলেন্ট আলসার এবং দাঁদ (Ring Worm) এর মতো চর্মরোগ সারাতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও মানুষ ও পশু-পাখির আরও অনেক রোগের চিকিৎসায় নিমের কার্যকারিতার কথা বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে দাবি করা হয়েছে।

সাম্প্রতিককালের বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ ও পশু-পাখির দেহে রোগ সৃষ্টিকারী বেশ কিছু  মারাত্মক ধরনের ছত্রাকের বিরুদ্ধে নিম কৃত্রিম ছত্রাক-নাশক (Fungicide) থেকেও বেশি কার্যকর। অন্যদিকে, কৃত্রিম ছত্রাক-নাশকগুলো ধীরে ধীরে রেজিষ্ট্যান্টও হয়ে পড়ছে। গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখা গেছে নিমের বিভিন্ন সক্রিয় যৌগ ১৪ ধরনের ছত্রাকের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকর।

ব্যাকটেরিয়া রোধক হিসাবেঃ বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে নিম তেল বেশ কয়েক প্রজাতির রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার কার্যক্রম দমিয়ে রাখতে সক্ষম। নিম্নলিখিত গুলো এদের মধ্যে প্রধানঃ
ষ্টেফাইলোকক্কাস অরিয়াস (Staphylococus aureus) :  ফুড পয়জনিং ও পুঁজ সৃষ্টিকারী রোগ (যেমন ফোঁড়া, অ্যাবসেস ইত্যাদি) সৃষ্টিতে এ ব্যাকটেরিয়ার জুড়ি নেই। এছাড়াও পেরিট্রোনাইটিস, সিস্টাইটিস ও ম্যানিনজাইটিস রোগে সেকেন্ডারি ইনফেকশন ঘটাতেও এটি সক্ষম। মানুষ ছাড়া দুগ্ধবতী গাভীর ওলান প্রদাহ (Mastitis) রোগ সৃষ্টিতে এ জীবাণুটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।  এতে গাভীর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এই ব্যাকটেরিয়ার অনেক ষ্ট্রেইনই আজাকল পেনিসিলিন ও অন্যান্য অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি রেজিষ্টান্ট হয়ে গেছে। নিম কার্যকরভাবে এ জীবাণুটির বেশ কটি স্ট্রেইনকে ধ্বংস করতে সক্ষম।

সালমোনেলা টাইফোসা (Salmonella Typhosa): এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, যা কিনা খাদ্য ও পানিতে বাস করে। টাইফয়েড, ফুড পয়জনিং, রক্তদূষণ এবং আন্ত্রিক প্রদাহসহ বেশ কয়েক ধরনের ইনফেকশন ঘটিয়ে থাকে। বর্তমানকালের অনেক অ্যান্টিবায়োটিকই এ জীবাণুর বিরুদ্ধে অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এটি ছাড়াও সালমোনেলাগণের অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া মানুষের বিভিন্ন রোগসহ ঘোড়া ও ভেড়ার সংক্রামক গর্ভপাত এবং পোলট্রি ও গবাদি পশুর বেশ কতকগুলো মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে থাকে। নিম এ রোগগুলো সারাতে অত্যন্ত কার্যকর।

ভাইরাসরোধক হিসেবেঃ ভাইরাসের বিরুদ্ধে নিমের কার্যকারিতা নিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে। বিশেষ করে বসন্ত রোগের জীবাণু যেমন পক্স ভাইরাসের বিরুদ্ধে এটি কার্যকর বলে এসব দেশের অনেকেই বিশ্বাস করে। এমনকি চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রীধারী ব্যক্তিরাও এটি বসন্ত (Small Pox), জল বসন্ত (Chicken Pox) ও আচিলের (Warts) চিকিৎসায় প্রাচীনকাল থেকেই নিম পাতার পেস্ট ব্যবহার করে আসছে। সাধারণত এগুলো সংক্রমিত চামড়াতে ঘষে ঘষে লাগানো হতো। সাম্প্রতিক সময়ে গুটি বসন্ত, জল বসন্ত ও মুরগির বসন্ত (Fowl Pox) রোগ নিয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে , এই প্রাচীন প্রচলিত প্রথাটির একটি জীব বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে। অশোধিত নিম নির্যাস ভাইরাস শোষণে সক্ষম। ফলে আক্রমণকালে ভাইরাস সুস্থ কোষে প্রবেশ করতে পারে না।
এছাড়াও ভেষজতাত্ত্বিক পরীক্ষায় নিম পাতার ভাইরাসরোধী গুণাগুণের সত্যতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অবশ্য এগুলো এখনও প্রাথমিক পর্যায়ের ফলাফল তবে বিজ্ঞানীরা এ থেকে অনেক কিছুই আশা করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণায় দেখা গেছে, নিম পাতার নির্যাসের জলীয় মিশ্রণ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের ডিএনএ পরিমারেজকে স্বল্প থেকে মধ্যমভাবে বাধা দিতে সক্ষম। জার্মানীতে এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিমের বীজের শাসের নির্যাসের ইথানলিক মিশ্রণ কার্যকরভাবে হারপেস ভাইরাসকে বাধা দিতে সক্ষম।

শতবর্ষ ধরে ভারতীয় আয়ূর্বেদ চিকিৎসকরা ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় নিম ব্যবহার করে আসছেন। ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে নিমের কার্যকারিতার কথা বহু পুরানো আয়ূর্বেদ শাস্ত্রে উল্লেখ আছে। এর মধ্যে খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ সালে সুশ্রুত লিখিত ও খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ সালে চরক লিখিত শাস্ত্রগুলো উল্লেখযোগ্য। ভারতের বাইরে নাইজেরিয়া ও হাইতিতে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় নিম পাতার চা পানের রেওয়াজ আছে। সাম্প্রতিককালে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, নিমের পাতা ও বীজের নির্যাস ম্যালেরিয়ার পাটোজোয়া প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরামকে (Plasmodium falciparum) ধ্বংস করতে সক্ষম। আর এজন্য নিমের যে সক্রিয় যৌগটি দায়ী তার নাম হচ্ছে জেডুনিন (Gedunin)। এটি এক ধরনের লিমোনোইড যৌগ, যা ম্যালেরিয়া আক্রান্ত কোষ কালচারে কুইনাইনের মতোই কাজ করে।

বাংলাদেশ ও ভারতসহ এশিয়া ও আফ্রিকার বহু দেশে কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন দাঁত মাজার জন্য বিভিন্ন গাছের ডাল ব্যবহার করে আর এগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই নিম গাছের ডাল। দন্ত চিকিৎসকরা ইতোমধ্যেই এই প্রাচীন প্রথাটির স্বীকৃতি দিয়েছেন। কারণ তারা দেখেছেন নিম পেরিওডেন্টাল রোগ (Periodental Disease) নিবারণে অত্যন্ত কার্যকর। তবে এই উপকারিতার জন্য নিয়মিত মাড়ি ম্যাসাজ, প্লাক (Plague)  তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করতে হবে। নিমের নিজস্ব এন্টিসেপটিক গুণ, নাকি তিনটিই একত্রে তা এখনও অস্পষ্ট। একটি জার্মান কোম্পানী বর্তমানে তাদের উৎপাদিত টুথপেস্ট এবং ওরাল হাইজিন প্রিপারেশনে সক্রিয় উপাদান হিসেবে নিম গাছের বাকলের নির্যাস ব্যবহার করেছে। এটা দাবি করা হচ্ছে যে, নিম ছালের নির্যাস মাড়ির প্রদাহ এবং অন্যান্য পেরিওডেন্টাল রোগ নিরাময়ে ও নিবারণে অত্যন্ত কার্যকর।

গবেষণায় দেখা গেছে, নিম তেল একটি শক্তিশালী শুক্রাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, নিম তেল মহিলাদের জন্য নতুন ধরনের কার্যকরী গর্ভনিরোধক হতে পারে। এটি ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই শুক্রাণু মেরে ফেলতে সক্ষম। গবেষণা এবং মাঠ পর্যাযে এক মিলিঃ ইন্ট্রাভ্যাজাইনাল (Intravaginal) ডোজ হিসেবে নিম তেল ব্যবহার করে এর কার্যকারিতা প্রমাণ করা গেছে। পভিফনা কলার হিষ্ট্রোপ্যাথলজি (Histopathology) করে তাতে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বর্তমানে ভারতে সেনসাল (Sensal)নামে একটি নিম তেলের ফর্মূলেশন গর্ভনিরোধক হিসাবে বাজারে ছাড়া হয়েছে। অন্যদিকে নিম পাতার নির্যাস পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এটি বিভিন্ন প্রজাতির পুরুষ স্তন্যপায়ীর উর্বরতা কমিয়ে দিতে সক্ষম।

সারা পৃথিবীর ৫০টি ঔষধী গাছ জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক পরীক্ষার পর নিমের এই বহুবিধ গুণাগুণের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ নিমকে ‘২১ শতকের বৃক্ষ’ বলে ঘোষণা করেছে।  এতেই বোঝা যায় নিমের গুরুত্ব কতখানি।

 নিম মানুষ ও পশু-পাখির বহু রোগের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর হলেও এগুলো ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়। কারণ এক একটি রোগের জন্য নিমের এক একটি দ্রব্যের এক একটি আদর্শ মাত্রা রয়েছে। আন্দাজের উপরে এগুলো ব্যবহার করলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে বৈকি। বিশেষ করে নিম তেলের ক্ষেত্রেই বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এশিয়ার কোন কোন অঞ্চলে নিম তেল সরাসরি খাওয়া হয়। অথচ নিম গবেষকরা মুখ পথে (Oral route) নিম তেল ব্যবহার এখনও অনুমোদন করেননি। কারণ ৫ মিঃ লিঃ মাত্রায় এ তেল গ্রহণ করলে শিশুরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এজন্য নিম তেল নিজে ততটা দায়ী নয় বরং তেলের সঙ্গে অন্যান্য দ্রব্যের দূষনের কারণেই এটি হয়ে থাকে। জার্মানীতে গবেষণায় দেখা গেছে, পরিষ্কার ও দূষণহীন নিম বীজের শাস থেকে আহরিত তেল কোন বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে না। নিমের বীজ এবং অন্যান্য অংশ থেকে তৈরি কীটনাশকগুলো কখনোই স্তন্যপায়ীদের মধ্যে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে না। নিম প্রকৃতি প্রদত্ত মহৌষধ। তবে যথাযথ ব্যবহারের মধ্যেই প্রত্যেকটি জিনিষের কার্যকারিতা নির্ভর করে। সে জন্য যথাযথভাবে নিম ব্যবহার করা উচিত। নিমের সঠিক ব্যবহারে রোগমুক্তি ঘটবে এবং স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। যক্ষা, চর্মরোগ, সাপের কামড়, ম্যালেরিয়া, ডায়াবেটিস প্রভৃতি রোগের ক্ষেত্রে নিমকে একমাত্র উদ্ধারকারী মনে করা হয়।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | জাগো২৪.নেট

কারিগরি সহায়তায় : শাহরিয়ার হোসাইন