এ পর্যন্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ২ হাজার ৬৫৭টি স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে
তোফায়েল হোসেন জাকির: গাইবান্ধায় মা ও শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে কাজ করছে ‘মমতা’ নামের একটি প্রকল্প। গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের স্বাস্থ্যসেবায় জেলার ৪ টি উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে এ প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসকেএস ফাউন্ডেশনের বাস্তবায়নে এ পর্যন্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ২ হাজার ৬৫৭টি স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। এখানে ২৪ ঘণ্টা প্রসূতি মায়েরা আসেন নিরাপদে সন্তান প্রসবের জন্য। প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী সেবার জন্য আপন ঠিকানায় পরিণত হয়েছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো। এর মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি হলো ‘পদুমশহর মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র’।
সম্প্রতি সরেজমিনে জানা যায়, বছর তিনেক আগেও ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি অন্যান্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মতই চলত। জরাজীর্ণ পরিবেশে নামমাত্র সেবা পেত রোগীরা। কিন্তু ২০২১ সালের এপ্রিলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশন বাস্তবায়িত ‘মমতা’ প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন করে কার্যক্রম শুরু হয়। এ প্রকল্পের আওতায় দুইজন মিডওয়াইফ, একজন আয়া, একজন নৈশপ্রহরী এবং একজন টেকনিক্যাল অফিসার (টিওসিবিএফ) নিয়োগ দেওয়া হয়। সেইসাথে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিবেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সকল ধরনের যন্ত্রপাতি নিশ্চিত করা হয়। এরপর থেকেই গর্ভবতী নারীদের প্রসব পূর্ববর্তী, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী সেবার মাধ্যমে নতুন করে পরিচিতি পায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি।
পদুমশহর ইউনিয়নের ডিমলা এলাকার প্রসূতি রাশেদা বেগম (২৪) বলেন, আমি মততা প্রকল্পের সহযোগিতায় পদুমশহর মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করেছি। এর আগে প্রথম চেক-আপ করার জন্য ক্লিনিকে যাই। ওখানে আপারা আমার রক্ত, প্রসাব, প্রেসার পরীক্ষা আর ওজন মাপে। আবার দ্বিতীয় বেলাতেও এভাবেই সেবা নেই। যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে পেটে বাচ্চা ভালো আছে কি-না। মমতা ক্লিনিকে যাই। ওষুধপাতি যা কিছু লাগে সব বিনামূল্যে করে দেন। আমরা চাই যেন এটা দীর্ঘমেয়াদি থাকে। আমরা এভাবে যাতে সেবা নিতে পারি।
পদুমশহর মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) ফরিদা পারভিন বলেন, আমরা একজন গর্ভবতী মা’কে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশাপাশি ওয়ার্ড পর্যায়ে বাড়িতে গিয়েও সেবা দেই। এ পর্যন্ত আমরা এ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মোট ১ হাজার ৭৪টি স্বাভাবিক প্রসব করেছি। মাত্র কয়েকজন প্রসূতিকে আমাদের জেলা হাসপাতালে রেফার্ড করতে হয়েছে।
পদুমশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুল হক বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের গর্ভবতী মায়েরা এখান থেকে বিনামূল্যে সেবা পাচ্ছেন। আমাদের ইউনিয়নও বাড়তি পরিচিতি পাচ্ছে। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির জন্য সাধ্যমতো সহায়তা করে আসছি।
মমতা প্রকল্পের সমন্বয়কারী বাহারাম খাঁন বলেন, মা ও শিশু মৃত্যুহার রোধে সরকারের ব্যাপক পরিকল্পনা এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মমতা প্রকল্পই হয়ে উঠেছে একটি সেতুবন্ধন। আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ এবং কোরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কইকা) এর আর্থিক সহায়তায় এসকেএস ফাউন্ডেশন ‘মমতা প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে। ২০২১ সাল থেকে আমরা গাইবান্ধা জেলার চারটি উপজেলা সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে এ প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছি। চলতি ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে আমাদের এই প্রজেক্ট শেষ হবে। তবে আমরা আশা করি প্রকল্পটি আরও দীর্ঘ মেয়াদে বাড়বে।
তোফায়েল হোসেন জাকির, জাগো২৪.নেট 

























