রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৪ পূর্বাহ্ন

শাক-সবজির অগ্নিমূল্যে অস্থির ভোক্তারা

তোফায়েল হোসেন জাকির, জাগো২৪.নেট
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪

গাইবান্ধার হাট-বাজারগুলোতে লাফিয়ে বাড়ছে শাক-সবজির দাম। গত একসপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচে ১২০ টাকা বেড়ে তা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ দরে। একইসঙ্গে শাক-সবজিও ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। বর্তমানে কাঁচা তরকারি বাজারে এসে অস্থির হয়ে ওঠছেন সাধারণ ভোক্তারা। ফলে শ্রমজীবি খেটে খাওয়া মানুষরা চরম বেকায়দায় পড়েছেন। সংসার চালাতে গিয়ে তাদের মাঝে শুরু হয়েছে হাঁসফাঁস।

রোববার (৬ অক্টোবর) গাইবান্ধা শহরের পুরাতন বাজারসহ বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে- প্রতি কেজি পটল ৬০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, মুখীকচু ৫০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, মূলা ৪০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, সিম ২০০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, তরই ৫০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৭০ টাকা, কদোয়া ৪০ টাকা,  টমেটো ১২০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া  ধনেপাতা শাক ১০০ টাকা, লাউ শাক ৪০ টাকা, লাল শাক ৪০ টাকা ও লাউ ৩০-৪৫ টাকা পিস (প্রকার ভেদে) বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত এক সপ্তাহ আগে ওইসব পণ্যের দাম অনেকটা কম ছিল। তবে আলু-পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

জানা গেছে, গাইবান্ধা জেলায় গেল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমজীবী মানুষ এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এরই মধ্যে গো-খাদ্যের সংকটসহ বেড়েই চলছে সব ধরণের ভোগ্যপণ্যের দাম। সেই সাথে কাঁচা মরিচ যেন সোনার হরিণ। প্রতিটি সবজির দাম দ্বিগুণ হারে বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ফলে সবজি এখন সাধারণ মানুষের মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে যায়, উত্তর জনপদের জেলা গাইবান্ধা। একসময় এ জেলাটি মঙ্গাঁ পিঁড়িত হিসেবে পরিচিত ছিল। এই মঙ্গাঁ দুরীকরণে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে সেই মঙ্গাঁ নামটি ঘুচিয়ে স্বচ্ছলতা ফিরেছে সকল পেশা-শেণির মানুষের। এরই মাঝে দফায় দফায় ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামে সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে ফের শুরু হয়েছে নিরব দুর্ভিক্ষ। সেই সঙ্গে নদীবেষ্টিত গাইবান্ধায় বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগ যেন নিত্যসঙ্গী। এরপ্রভাবে মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো চরম আর্থিক সংকটে পড়ে। ইতোমধ্যে হুহু করে বেড়ে চলেছে ভোগ্যপণ্য কিংবা নিত্যপণ্য ও বিভিন্ন জিনিসিপত্রের দাম। এমন দামের কারনে একেবারই বেসামাল সাধারণ মানুষেরা। দিনদিন তাদের ব্যয় বাড়লেও, বাড়ছে না আয়-রোজগার। ফলে সংসার চলাতে হাঁসফাঁস উঠেছে তাদের।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে প্রচণ্ড আঘাত হানতে শুরু করেছে। অধিক দামে পণ্যসামগ্রী কেনা ভুক্তভোগিদের বোবা কান্না যেনো দেখার কেউ নেই। অস্থির এই বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের সঠিক তদারকি না থাকলে সাধারণ মানুষ আরও বেকায়দায় পড়তে পারে বলে একাধিক সুত্রে জানা গেছে।

কাচারী বাজারে সবজি কিনতে আসা একজন ভ্যানচালক জাহিদুল ইসলাম জানান, যেভাবে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, সেতুলনায় আয় বাড়েনি তার। এতে করে পরিবারের চাহিদা পূরণে বাড়ছে ঋণের বোঝা।

সাদুল্লাপুর বাজারের সবজি বিক্রেতা ইমরান হোসেন বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষকের মাঠে শাক-সবজি উৎপাদন কম হচ্ছে। এতে আমদানির চেয়ে চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, সম্প্রতি অতিবৃষ্টিতে সবজির জমিতে পানি উঠায় উৎপাদন কমেছে। এ কারণে কিছুটা দাম বেড়েছে। আবহাওয়া অনকূলে আসলে শাক-সবজির দাম কমতে পারে।

গাইবান্ধার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আফসানা পারভীন জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণে তদারকি অব্যাহত রয়েছে। যারা কৃত্রিম সংকট বা অতিরিক্ত দামে খাদ্যপণ্য বিক্রি করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | জাগো২৪.নেট

কারিগরি সহায়তায় : শাহরিয়ার হোসাইন