বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩০ অপরাহ্ন

বিদেশি পেঁয়াজের দখলে পাবনার হাট-বাজার

মাসুদ রানা, করেসপন্ডেন্ট, জাগো২৪.নেট, পাবনা
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২২
পাবনা জেলার পেঁয়াজ আবাদের অন্যতম উপজেলা সুজানগর। উপযুক্ত মাটি আর আবহাওয়ার কারণে পেঁয়াজের আবাদ বেশ ভালো হয়ে থাকে এই অঞ্চলে। সবচেয়ে বেশি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়ে থাকে এখানকার সুজানগর পৌরসভার হাটে। বর্তমানে বিভিন্ন হাটে পাইকারি পেঁয়াজের দাম যাচ্ছে ১২ থেকে সাড়ে ১২শ টাকা মণ দরে। কেজিতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরের এই দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করে বিরাট আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছে এই জেলার প্রান্তিক পেঁয়াজ চাষিরা। বর্তমান বাজারে এক কেজি পেঁয়াজের দানা চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে চাষিদের।
আর সেই দানা নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করতে শ্রমিক, কীটনাশক, সার দিয়ে বিঘাপ্রতি ফলনে ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু সেই কষ্টের পেঁয়াজই এখন কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। পেঁয়াজের সংকট দেখিয়ে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে মৌসুমের সময় কৃষকদের ক্ষতি করছে সরকার। এখনও দেশি পেঁয়াজ বাজারে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। যা দিয়ে দেশের পেঁয়াজের সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব।
পেঁয়াজে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন চাষিরা। আমদানিকৃত বিদেশি পেঁয়াজের কারণে চাষকৃত দেশি পেঁয়াজের বাজারে নেমেছে ধস। মৌসুমের শেষে দিকে এসেও নিজেদের ঘরে রাখা সংরক্ষিত হালি পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না জেলার প্রান্তিক কৃষক। আর এই কারণে দেশি পেঁয়াজ চাষে ক্রমেই আগ্রহ হারাচ্ছে তারা।
কৃষকরা বলছেন, দেশে সব কিছুর মূল্য বৃদ্ধি পেলেও পেঁয়াজের মূল্য প্রতিদিনিই কমছে। সরকারের সঠিক পরিকল্পনা না থাকায় এই ক্ষতিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। সপ্তাহে দুই দিন করে স্থানীয় সুজানগরের একটি হাট থেকেই ২০ থেকে ২৫ ট্রাক দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ করা হচ্ছে। এই জেলাতে এখনও প্রচুর পরিমাণ পেঁয়াজ রয়েছে কৃষকের ঘরে। দেশের সব স্থানীয় বাজারে চাহিদা রয়েছে এই অঞ্চলের পেঁয়াজের। আর এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই বাজারে উঠতে শুরু করবে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ। তাই দেশের পেঁয়াজ চাষিদের বাঁচাতে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির এলসি বন্ধের দাবি জানান কৃষকরা।
গত বছরের পেঁয়াজের মৌসুমে শুধু সুজানগর উপজেলাতেই ১৯ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয় পেঁয়াজ। এর মধ্যে এক হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। উপজেলাতে মোট পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে তিন লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। যা স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হয় সারা দেশে। তবে মৌসুমের প্রথম থেকেই আর্থিক ক্ষতিতে রয়েছে চাষিরা। ঘরে সংরক্ষিত শুকনো হালি পেঁয়াজ নতুন পেঁয়াজের দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।
উপজেলার কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, এখনও উপজেলার প্রান্তিক কৃষকদের কাছে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। আর এলসি চালু থাকার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা।
এ ব্যাপারে পাবনার সুজানগর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রাফিউল ইসলাম বলেন, দেশের কৃষিসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর মধ্যে পাবনা জেলার নাম অন্যতম। এই জেলার মাটি ও আবহাওয়ার জন্য ফলন বেশ ভালো হয়ে থাকে। এই জেলার এক পাশে রয়েছে বিশাল বিল অঞ্চল, আরেক পাশে পদ্মা নদী। এই অঞ্চলের বিশেষ করে এই একটি উপজেলায় ব্যাপক পরিমাণ পেঁয়াজ আবাদ হয়ে থাকে।
সারা দেশের দেশি পেঁয়াজের যে চাহিদা, তার অনেকাংশই পূরণ করে আসেছ এই জেলা ও উপজেলার পেঁয়াজ। তবে পেঁয়াজের বাজার উঠা-নামা করছে মৌসুমের প্রথম দিক থেকেই। পেঁয়াজের ফলন ভালো হওয়ার জন্য আমরা নতুন নতুন জাতের বীজ সরবরাহ করছি, পরামর্শ প্রদান করছি কৃষকদের।
পেঁয়াজ চাষিদের ক্ষতির ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আগে কৃষক যেখানে ২০ থেকে ২৫ মণ পেঁয়াজ পেত বিঘাপ্রতি, সেখানে একই জমিতে বর্তমানে কৃষক প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ মণ পেঁয়াজ পাচ্ছে। সে হিসাবে দাম খুব একটা কমেনি। লাভের বিষয়টি আসলে বলা মুশকিল। তবে পেঁয়াজের বীজের দাম ও কৃষি সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে হয়তো লাভটা কম হচ্ছে।’
আর বিদেশি পেঁয়াজ আমদানির ব্যাপারে এই কর্মকর্তা জানান, কৃষকের যে অভিযোগ সরকারের এলসি খোলা নিয়ে, সেটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তবুও কৃষকদের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি এই সমস্যার সমাধান হবে; কৃষক তার পেঁয়াজের সঠিক মূল্য পাবে।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | জাগো২৪.নেট

কারিগরি সহায়তায় : শাহরিয়ার হোসাইন