মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আলুবীজ-সারের কৃত্রিম সংকটে খরচ দ্বিগুণ, দুশ্চিন্তায় কৃষক 

চলতা রবি মৌসুমে শীতকালীন শাকসবজি, ভুট্টা, আলু, গম, সরিষা ও বোরো আবাদে সার সংকটে চাষিরা। অন্যদিকে এবছর দ্বিগুণ দাম দিয়ে আলুবীজ ক্রয় করতে হচ্ছে চাষিদের। বীজ, সার ও কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি এবং পরিচর্যায় খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা। এতে লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কিষাণ-কৃষাণিরা। তারপরেও উপজেলায় আলুরোপণ ও ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন কিষাণ-কৃষাণি ও শ্রমিকেরা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফসল নিয়ে স্বপ্ন বুনছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা।
জানা গেছে, ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক মাসে আগাম আউশ, আমন ধান কাটা-মাড়াই শেষে এখন সেই জমি প্রস্তুত করে আলু রোপণ করছেন। হিমাগার ও দোকান থেকে বীজ সংগ্রহ, জমি প্রস্তুত, সার প্রয়োগসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত কৃষকেরা। উপজেলার বালাপাড়া, ছাতিয়ানগড়, পাকেরহাট ঘুরে দেখা গেছে, জমি প্রস্তুত শেষে শ্রমিকেরা বিভিন্ন জাতের আলু রোপণ করছেন। আবার কোথাও জমিতে আগাম জাতের আলুর চারা গজিয়ে ওঠায় কৃষক-শ্রমিকেরা সেচ, আগাছা পরিষ্কার, সার ও কীটনাশক স্প্রে করছেন। এসব কাজে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। অন্যান্য ফসলের তুলনায় আলুচাষে সময় কম লাগে এবং লাভ বেশি হয়। মাত্র ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে আলু উত্তোলন করে ভূট্টা, সরিষাসহ অন্যান্য ফসল চাষ করবেন বলে জানান স্থানীয় কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৯৫৮ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশি, গ্রানুলা, সেভেন, সানসাইন, কুইন এ্যানি, এস্টোরিক্স, সার্পোমিরা, ক্যারেজ জাতের আলু রোপণ হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবারও আলু চাষে লাভবান হবেন চাষিরা বলে উপজেলা কৃষি বিভাগ আশাপোষণ করছে।
কৃষকেরা জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর আলুর বীজের দাম প্রায় দ্বিগুণ। প্রতিকেজিতে ৩০-৫৫ টাকা পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান সময়ে প্রতিকেজি সেভেন জাতের আলু ১০০-১১০ টাকা, দেশি ৯০ টাকা, সার্পোমিরা ১২০ টাকা, সানসাইন ৮৫ টাকা, এস্টোরিক্স (কার্ডিনাল) ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলার পাকেরহাটের আলুবীজ ব্যবসায়ী মো. আইনউদ্দিন জানান, আলু চাষে চাষিদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। সে তুলনায় আলুবীজের জোগান অপ্রতুল। পাইকারি বাজারে পণ্য সংকট বলে এবার বীজের দাম তুলনামূলক বেশি।
উপজেলার বালাপাড়া গ্রামের কৃষক লিটন ইসলাম জানান, আমি প্রতিবছর আলু চাষ করি। এবছর আলুবীজের দাম ও উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। বিঘাপ্রতি অন্তত ৯-১০ মণ আলুবীজ লাগে। এবছর প্রতিকেজি এস্টারিক্স (কার্ডিনাল) জাতের আলু ১১৫ টাকা দরে ক্রয় করেছি। যা গত বছর ছিল প্রতিকেজি ৬৫ টাকা।
ওই এলাকার আরেক কৃষক সাবির হোসেন জানান, আলু চাষে ভালোই লাভ হয়। কিন্তু আলুবীজ ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবার বিঘাপ্রতি ৩০-৪০ হাজার টাকা বেড়েছে। এতে লাভের পরিমাণ কমে যাবে। তবে আবহাওয়া ও বাজারদর যদি ভালো পাওয়া যায় তাহলে আলু চাষে লাভের আশা করছি।
উপজেলা কৃষি অফিসার ইয়াসমিন আক্তার জানান, সারাবছরে বাজারে আলুর দাম বেশি থাকায় এবার আলু চাষে কৃষকের আগ্রহ বেশি। আলুর ভালো উৎপাদন ধরে রাখতে কৃষি বিভাগ মাঠে কাজ করছে।
জনপ্রিয়

আলুবীজ-সারের কৃত্রিম সংকটে খরচ দ্বিগুণ, দুশ্চিন্তায় কৃষক 

প্রকাশের সময়: ০২:১৭:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪
চলতা রবি মৌসুমে শীতকালীন শাকসবজি, ভুট্টা, আলু, গম, সরিষা ও বোরো আবাদে সার সংকটে চাষিরা। অন্যদিকে এবছর দ্বিগুণ দাম দিয়ে আলুবীজ ক্রয় করতে হচ্ছে চাষিদের। বীজ, সার ও কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি এবং পরিচর্যায় খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা। এতে লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কিষাণ-কৃষাণিরা। তারপরেও উপজেলায় আলুরোপণ ও ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন কিষাণ-কৃষাণি ও শ্রমিকেরা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফসল নিয়ে স্বপ্ন বুনছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা।
জানা গেছে, ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক মাসে আগাম আউশ, আমন ধান কাটা-মাড়াই শেষে এখন সেই জমি প্রস্তুত করে আলু রোপণ করছেন। হিমাগার ও দোকান থেকে বীজ সংগ্রহ, জমি প্রস্তুত, সার প্রয়োগসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত কৃষকেরা। উপজেলার বালাপাড়া, ছাতিয়ানগড়, পাকেরহাট ঘুরে দেখা গেছে, জমি প্রস্তুত শেষে শ্রমিকেরা বিভিন্ন জাতের আলু রোপণ করছেন। আবার কোথাও জমিতে আগাম জাতের আলুর চারা গজিয়ে ওঠায় কৃষক-শ্রমিকেরা সেচ, আগাছা পরিষ্কার, সার ও কীটনাশক স্প্রে করছেন। এসব কাজে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। অন্যান্য ফসলের তুলনায় আলুচাষে সময় কম লাগে এবং লাভ বেশি হয়। মাত্র ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে আলু উত্তোলন করে ভূট্টা, সরিষাসহ অন্যান্য ফসল চাষ করবেন বলে জানান স্থানীয় কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৯৫৮ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশি, গ্রানুলা, সেভেন, সানসাইন, কুইন এ্যানি, এস্টোরিক্স, সার্পোমিরা, ক্যারেজ জাতের আলু রোপণ হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবারও আলু চাষে লাভবান হবেন চাষিরা বলে উপজেলা কৃষি বিভাগ আশাপোষণ করছে।
কৃষকেরা জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর আলুর বীজের দাম প্রায় দ্বিগুণ। প্রতিকেজিতে ৩০-৫৫ টাকা পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান সময়ে প্রতিকেজি সেভেন জাতের আলু ১০০-১১০ টাকা, দেশি ৯০ টাকা, সার্পোমিরা ১২০ টাকা, সানসাইন ৮৫ টাকা, এস্টোরিক্স (কার্ডিনাল) ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলার পাকেরহাটের আলুবীজ ব্যবসায়ী মো. আইনউদ্দিন জানান, আলু চাষে চাষিদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। সে তুলনায় আলুবীজের জোগান অপ্রতুল। পাইকারি বাজারে পণ্য সংকট বলে এবার বীজের দাম তুলনামূলক বেশি।
উপজেলার বালাপাড়া গ্রামের কৃষক লিটন ইসলাম জানান, আমি প্রতিবছর আলু চাষ করি। এবছর আলুবীজের দাম ও উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। বিঘাপ্রতি অন্তত ৯-১০ মণ আলুবীজ লাগে। এবছর প্রতিকেজি এস্টারিক্স (কার্ডিনাল) জাতের আলু ১১৫ টাকা দরে ক্রয় করেছি। যা গত বছর ছিল প্রতিকেজি ৬৫ টাকা।
ওই এলাকার আরেক কৃষক সাবির হোসেন জানান, আলু চাষে ভালোই লাভ হয়। কিন্তু আলুবীজ ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবার বিঘাপ্রতি ৩০-৪০ হাজার টাকা বেড়েছে। এতে লাভের পরিমাণ কমে যাবে। তবে আবহাওয়া ও বাজারদর যদি ভালো পাওয়া যায় তাহলে আলু চাষে লাভের আশা করছি।
উপজেলা কৃষি অফিসার ইয়াসমিন আক্তার জানান, সারাবছরে বাজারে আলুর দাম বেশি থাকায় এবার আলু চাষে কৃষকের আগ্রহ বেশি। আলুর ভালো উৎপাদন ধরে রাখতে কৃষি বিভাগ মাঠে কাজ করছে।