শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৬ অপরাহ্ন

স্বামীর ঘরছাড়া হয়ে স্ত্রী কেন পিত্রালয়ে

করেসপন্ডেন্ট, জাগো২৪.নেট, গাইবান্ধা
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আব্দুল হানিফ উদ্দিন (৪১)। তার অভিযোগ, স্ত্রী অনৈতিক কাজে জড়িত। এ কারণে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আর স্ত্রী (৩৪) বললেন, আমাকে অন্য ছেলের সঙ্গে অনৈতিক কাজের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে স্বামী। এটি স্বীকার না করায় মারপিট করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার দুইমাস ধরে আমি পিত্রালয়ে অবস্থান করছি।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের কিশামত বালুয়া (বাঁধেরধার) গ্রামে দেখা যায়, ওই স্ত্রী তার বাবার বাড়িতে দুশ্চিন্তায় তাকিয়ে রয়েছে।

এসময়  ওই স্ত্রী ও তার স্বজনরা জানায়, গত ২০০৬ সালে সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম মান্দুয়ারপাড়া গ্রামের আব্দুল কাশেম উদ্দিনের ছেলে আব্দুল হানিফ উদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে হয়। এসময় সুখের সংসারের জন্য লক্ষাধিক টাকা, স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য আসবাবপত্র দেওয়া হয় স্বামীকে। দাম্পত্য জীবনে তাদের ঘরে আসে তিন সন্তান।

ধারবাহিকতায় প্রায়ই স্ত্রীকে বাবার বাড়িতে থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দেয় হানিফ। বাধ্য হয়ে কয়েক দফায় টাকা এনে স্বামীর হাতে তুলে দেয় স্ত্রী। আবার কখনো টাকা দিতে না পারলে তার ওপর নেমে আসে অমানসিক নির্যাতন। এরই মধ্যে ভাগিশরীক বেলাল হোসেন গংদের সঙ্গে হানিফ গংদের জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে। একারণে আর্থিক সংকটে পড়ে হানিফ।

একপর্যায়ে বেলাল হোসেনকে ফাঁসানোর জন্য নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী বেলাল হোসেনের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে হানিফ। এ সুবাদে হানিফের ডাকে হরদমে বাড়িতে যাওয়া-আসা করে বেলাল। এই বেলালকে দিয়ে স্ত্রীর অনৈতিক কাজে জড়িয়ে মোটা অংকের জরিমানা আদায়ের ফন্দি নেয়। কিন্তু হানিফের সেই পরিকল্পনা তার স্ত্রী ও বেলাল কখনো বুঝতে পারিনি।

এরই একপর্যায়ে গত ২৭ জুলাই দুপুরের দিকে স্ত্রীর মোবাইলের সমস্যা দেখা দেয়। সেটি শ্বশুর-শাশুরির পরামর্শে বেলালের কাছে ঠিক করা জন্য যায়। এদিকে এই ফোনটি ঠিক করার সময় বাড়ির বাহির থেকে পুর্বপরিকল্পিকভাবে হানিফের লোকজন হইচই করে বলে যে, হানিফের স্ত্রী ও বেলাল অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। অথচ এমন কোন ঘটনা ঘটেনি বলে ওই নারী ও বেলালের দাবি। এ ঘটনার পর হানিফ তার স্ত্রীকে ওই ঘটনা স্বীকার করতে বলে। বললেই বেলালের কাছে ৫ লাখ টাকা জরিমানা নেওয়া যাবে। কিন্তু এই মিথ্যা অপবাদ দেওয়া কিছুতেই রাজী ছিলো না স্ত্রী। বাধ্য হয়ে তাকে এলোপাথারিভাবে মারধর করে স্থানীয়দের মাঝে এই মিথ্যা অপবাদটি ছড়িয়ে দেয় হানিফ। এরপর স্থানীয়ভাবে বসা হয় শালিস-দরবার। সেখানেও মারপিট করা হয় স্ত্রীকে। বাধ্য হয়ে অন্য এক নারী তার হেফাজতে নিয়ে ওই বধূকে পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেয়। সেই থেকে এ পর্যন্ত বাবার বাড়িতে অবস্থান করছে হানিফের স্ত্রী।

এ বিষয়ে বেলাল হোসেন ও তার পরিবার জানায়, বেলালের সঙ্গে হানিফের স্ত্রী কোন কিছুই ঘটেনি। তাদের পুর্বপরিকল্পনার বাস্তবরূপ দিতে এই মিথ্যা ঘটনাটি রটানো হয়েছে।

ওই স্ত্রী আরও বলেন, সেইদিন শ্বশুর-শাশুরীর অনুমোতিতে বেলালের কাছে মোবাইল ফোন ঠিক করতে যাই। এসময় তারা হইচই শুরু করে আমাদের মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে।

এ বিষয়ে আব্দুল হানিফ উদ্দিন জানান, তার স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে বেলালের সঙ্গে পরকিয়া করে আসছিল। এ বিষয়ে একাধিকবার বাধা দিলেও সেটি কর্নপাত করেনি স্ত্রী। এরই মধ্যে বেলালের সঙ্গে মেলামেশা করাকালে বাড়ির লোকজন সেটি দেখে ফেলে।

নলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য শাহাদৎ হোসেন  বেলাল জাগো২৪.নেট-কে  বলেন, বিষয়টি দুইমাস পর লোকমুখে জানতে পারলাম। এতো বড় একটা ঘটনা সেটি কেন তাৎক্ষণিক পরিষদে জানালো না। ঘটনাটি কতটুকু সত্য-মিথ্যা সেটি আমার জানা নেই।

 

 

 

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | জাগো২৪.নেট

কারিগরি সহায়তায় : শাহরিয়ার হোসাইন