রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঘর নির্মাণের জন্য হাত পাতছেন সেই ভাইরাল সিদ্দিক

তোফায়েল হোসেন জাকির: নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে সিদ্দিক চোর (৩৭)। এক সময়ে চুরির অপবাদ নিয়ে দ্রুত হয়ে ওঠেন সেলিব্রেটি। তাকে দিয়ে দর্শকপ্রিয় ভিডিও কনন্টেন বানিয়ে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেন- ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবারেরা। এখন সেই সিদ্দিকের সংসার চলে না। স্ত্রীকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন একটি ভাঙা ঘরে। বর্তমানে এই ভাঙা ঘরটি নির্মাণের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পাতছেন সেলিব্রেটি এই সিদ্দিক।   

সম্প্রতি ওই সিদ্দিকের সঙ্গে দেখা হয়- গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা শহরে। তার একটি থাকার ঘর নির্মাণের জন্য সাহায্য করছিলেন তিনি। এসময় ভিডিওতে সিদ্দিক চোর হিসেবে চেনে ফেলেন অনেকে। এরই মধ্যে কথা হয় তার সঙ্গে। জানালেন নানা দুঃখের কথা।

জানা যায়, এই সিদ্দিকের  দরিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম। রয়েছে মানসিক সমস্যাও। জীবিকার তাগিদে করছিলেন ভিক্ষাবৃত্তি। এরই মধ্যে কয়েক বছর  আগে এক নারীর হাত থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে দৌড় দেয়। এরপর চোর ভেবে তাকে আটকের পর পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয়রা। সেই দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর এই সুযোগ কাজে লাগায় কিছু সংখ্যক ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবাররা। তাকে ‘‘সিদ্দিক চোর‘‘ অখ্যা দিয়ে নানা ধরণের নাটকের ফ্লিম তৈরী করেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয় এই সিদ্দিক। দ্রুত হয়ে ওঠেন সেলিব্রেটি।

স্থানীয়রা জানায়, রংপুরের মিঠাপকুর উপজেলার ইমাদপুর ইউনিয়নের গইলবাড়ী গ্রামের মৃত খতিব উদ্দিন ও মোছা. ভানু বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক। তার আরও চার বোন রয়েছে। জীবদ্দশায় পিতা খতিব উদ্দিন ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালাতেন। তার সন্তানদের মধ্যে এই আবু বক্কর সিদ্দিক একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। বাবার সংসারে হাল ধরতে সিদ্দিকও ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় নেমে পড়েন। এরই মধ্যে বিয়ে করলে সেই স্ত্রীটি মারা যায়। পরবর্তী আশমনি আক্তার নামের একজনকে দ্বিতীয় বিয়ে করে সিদ্দিক। এই সংসারটিও টেকেনি তার। মানসিক সমস্যা আর চরম দরিদ্রতার কারণে সিদ্দিককে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করে আশামনি। এরপর বগুড়া রেল স্টেশনের একটি চা দোকানে কাজ নেয় সিদ্দিক। পাশের একটি ফুটপাতে ভাতের দোকানে কাজ করছিলেন নছিমন খাতুন নামের কর্মচারি। একপর্যায়ে তৃতীয় বিয়ে করে নছিমনকে। এই নছিমনও মানসিক প্রতিবন্ধী। তবুও চলছে দাম্পত্য জীবন। জীবিকার তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চলে সিদ্দিকের। বসবাসের জন্য রয়েছে জরাজীর্ণ একটি ঘর। সেই ঘরটিও ঝড়ে লন্ডভন্ড করেছে। এভাবে দরিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা সিদ্দিকের।

এরই একপর্যায়ে কয়েক বছর আগে গাইবান্ধার ফুলছড়ি ঘাটে ভিক্ষা করতে গিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে সিদ্দিক। এসময় এক নারীর হাত থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে দৌড় দেয়। এ ঘটনায় স্থানীয়রা তাকে আটকের পর সোপর্দ করে পুলিশে। এই দৃশ্য ভিডিও ধারণের পর ধীরে ধীরে নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয় সিদ্দিক।

এরপর আলম মিয়া, বাবু ও ফারুকসহ আরও অনেকে সিদ্দিককে দিয়ে ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সর্ট নাটক তৈরীতে আয় করেন লাখ লাখ টাকা। এভাবে সিদ্দিক দিনদিনে হয়ে ওঠেন সেলিব্রেটি। তবে তাকে দিয়ে অন্যরা মোটা অংকের টাকা আয় করলেও সিদ্দিকের পকেট থাকে ফাঁকা। ওই পেজ ও ইউটিউবাররা ঢাকা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন লোকেশনে সিদ্দিককে নিয়ে মাসের পর মাস কাজ করে নিলেও দেওয়া হয়নি পারিশ্রমিক। শুধুমাত্র বাড়িতে আসার সময় তার হাতে দেওয়া হত গাড়ী ভাড়া। এখন এই ভাইরাল সিদ্দিকের কদর নেই বললেই চলে। কেউ খোঁজ নেয় না তার। ভিডিও কন্টেন করতেও আর ডাকে না কেউ। সিদ্দিককে চোর উপাধি দিয়ে আর লাখ লাখ টাকা রোজগার করে সটকে পড়েছে সবাই। বাধ্য হয়ে ফের ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় নেমেছে সেলিব্রেটি সিদ্দিক।

শহিদুল ইসলাম নামের এক দর্শক জানান, বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সিদ্দিকের নানা ধরণের সর্ট নাটক দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। এমনকি সিরাজগঞ্জে ব্যারিষ্টার সুমন ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠানে সিদ্দিককে বিশেষ অতিথি হিসেবে রাখা হয়েছিল। সেই সিদ্দিক আমার কাছে আর্থিক সাহায্য নেয়। এখন ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করছে এটি খুবই দুঃখজন বলে মনে করেন তিনি।

ভাইরাল আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, হামাক দিয়্যা ইউতিউব তিবিতে (টিভি) মেলাগুলা নাতক (নাটক) বানাছে। তামরা (তারা) নাখ নাখ (লাখ) ত্যাকা কামাই করচে। হামাক ত্যাকা দেয়নি কেউ। এখন হামার থাকার ঘর না থাকায় মানষের কাছে ত্যাকা (টাকা) সাহায্য নিতিছি। এক কথায় মুই একন বিক্ষা (ভিক্ষা) করি খাতিছোম।

ইমাদপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সাবেক সদস্য ও প্রতিবেশী ইব্রাহীম মিয়া বলেন, আবু বক্কর সিদ্দিকের পরিবারটি অত্যান্ত দুস্থ-অসহায়। সহায় সম্বল বলতে কিছুই নেই তাদের। আছে একটি ভাঙা ঘর। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে আমার ভাতা টাকা দিয়ে সিদ্দিককে সহযোগিতা করেছি। এছাড়া পরিষদের পক্ষ থেকেও  সহযোগিতা করা হচ্ছে।

 

জনপ্রিয়

ঘর নির্মাণের জন্য হাত পাতছেন সেই ভাইরাল সিদ্দিক

প্রকাশের সময়: ০৬:১১:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪

তোফায়েল হোসেন জাকির: নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে সিদ্দিক চোর (৩৭)। এক সময়ে চুরির অপবাদ নিয়ে দ্রুত হয়ে ওঠেন সেলিব্রেটি। তাকে দিয়ে দর্শকপ্রিয় ভিডিও কনন্টেন বানিয়ে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেন- ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবারেরা। এখন সেই সিদ্দিকের সংসার চলে না। স্ত্রীকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন একটি ভাঙা ঘরে। বর্তমানে এই ভাঙা ঘরটি নির্মাণের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পাতছেন সেলিব্রেটি এই সিদ্দিক।   

সম্প্রতি ওই সিদ্দিকের সঙ্গে দেখা হয়- গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা শহরে। তার একটি থাকার ঘর নির্মাণের জন্য সাহায্য করছিলেন তিনি। এসময় ভিডিওতে সিদ্দিক চোর হিসেবে চেনে ফেলেন অনেকে। এরই মধ্যে কথা হয় তার সঙ্গে। জানালেন নানা দুঃখের কথা।

জানা যায়, এই সিদ্দিকের  দরিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম। রয়েছে মানসিক সমস্যাও। জীবিকার তাগিদে করছিলেন ভিক্ষাবৃত্তি। এরই মধ্যে কয়েক বছর  আগে এক নারীর হাত থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে দৌড় দেয়। এরপর চোর ভেবে তাকে আটকের পর পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয়রা। সেই দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর এই সুযোগ কাজে লাগায় কিছু সংখ্যক ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবাররা। তাকে ‘‘সিদ্দিক চোর‘‘ অখ্যা দিয়ে নানা ধরণের নাটকের ফ্লিম তৈরী করেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয় এই সিদ্দিক। দ্রুত হয়ে ওঠেন সেলিব্রেটি।

স্থানীয়রা জানায়, রংপুরের মিঠাপকুর উপজেলার ইমাদপুর ইউনিয়নের গইলবাড়ী গ্রামের মৃত খতিব উদ্দিন ও মোছা. ভানু বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক। তার আরও চার বোন রয়েছে। জীবদ্দশায় পিতা খতিব উদ্দিন ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালাতেন। তার সন্তানদের মধ্যে এই আবু বক্কর সিদ্দিক একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। বাবার সংসারে হাল ধরতে সিদ্দিকও ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় নেমে পড়েন। এরই মধ্যে বিয়ে করলে সেই স্ত্রীটি মারা যায়। পরবর্তী আশমনি আক্তার নামের একজনকে দ্বিতীয় বিয়ে করে সিদ্দিক। এই সংসারটিও টেকেনি তার। মানসিক সমস্যা আর চরম দরিদ্রতার কারণে সিদ্দিককে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করে আশামনি। এরপর বগুড়া রেল স্টেশনের একটি চা দোকানে কাজ নেয় সিদ্দিক। পাশের একটি ফুটপাতে ভাতের দোকানে কাজ করছিলেন নছিমন খাতুন নামের কর্মচারি। একপর্যায়ে তৃতীয় বিয়ে করে নছিমনকে। এই নছিমনও মানসিক প্রতিবন্ধী। তবুও চলছে দাম্পত্য জীবন। জীবিকার তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চলে সিদ্দিকের। বসবাসের জন্য রয়েছে জরাজীর্ণ একটি ঘর। সেই ঘরটিও ঝড়ে লন্ডভন্ড করেছে। এভাবে দরিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা সিদ্দিকের।

এরই একপর্যায়ে কয়েক বছর আগে গাইবান্ধার ফুলছড়ি ঘাটে ভিক্ষা করতে গিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে সিদ্দিক। এসময় এক নারীর হাত থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে দৌড় দেয়। এ ঘটনায় স্থানীয়রা তাকে আটকের পর সোপর্দ করে পুলিশে। এই দৃশ্য ভিডিও ধারণের পর ধীরে ধীরে নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয় সিদ্দিক।

এরপর আলম মিয়া, বাবু ও ফারুকসহ আরও অনেকে সিদ্দিককে দিয়ে ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সর্ট নাটক তৈরীতে আয় করেন লাখ লাখ টাকা। এভাবে সিদ্দিক দিনদিনে হয়ে ওঠেন সেলিব্রেটি। তবে তাকে দিয়ে অন্যরা মোটা অংকের টাকা আয় করলেও সিদ্দিকের পকেট থাকে ফাঁকা। ওই পেজ ও ইউটিউবাররা ঢাকা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন লোকেশনে সিদ্দিককে নিয়ে মাসের পর মাস কাজ করে নিলেও দেওয়া হয়নি পারিশ্রমিক। শুধুমাত্র বাড়িতে আসার সময় তার হাতে দেওয়া হত গাড়ী ভাড়া। এখন এই ভাইরাল সিদ্দিকের কদর নেই বললেই চলে। কেউ খোঁজ নেয় না তার। ভিডিও কন্টেন করতেও আর ডাকে না কেউ। সিদ্দিককে চোর উপাধি দিয়ে আর লাখ লাখ টাকা রোজগার করে সটকে পড়েছে সবাই। বাধ্য হয়ে ফের ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় নেমেছে সেলিব্রেটি সিদ্দিক।

শহিদুল ইসলাম নামের এক দর্শক জানান, বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সিদ্দিকের নানা ধরণের সর্ট নাটক দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। এমনকি সিরাজগঞ্জে ব্যারিষ্টার সুমন ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠানে সিদ্দিককে বিশেষ অতিথি হিসেবে রাখা হয়েছিল। সেই সিদ্দিক আমার কাছে আর্থিক সাহায্য নেয়। এখন ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করছে এটি খুবই দুঃখজন বলে মনে করেন তিনি।

ভাইরাল আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, হামাক দিয়্যা ইউতিউব তিবিতে (টিভি) মেলাগুলা নাতক (নাটক) বানাছে। তামরা (তারা) নাখ নাখ (লাখ) ত্যাকা কামাই করচে। হামাক ত্যাকা দেয়নি কেউ। এখন হামার থাকার ঘর না থাকায় মানষের কাছে ত্যাকা (টাকা) সাহায্য নিতিছি। এক কথায় মুই একন বিক্ষা (ভিক্ষা) করি খাতিছোম।

ইমাদপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সাবেক সদস্য ও প্রতিবেশী ইব্রাহীম মিয়া বলেন, আবু বক্কর সিদ্দিকের পরিবারটি অত্যান্ত দুস্থ-অসহায়। সহায় সম্বল বলতে কিছুই নেই তাদের। আছে একটি ভাঙা ঘর। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে আমার ভাতা টাকা দিয়ে সিদ্দিককে সহযোগিতা করেছি। এছাড়া পরিষদের পক্ষ থেকেও  সহযোগিতা করা হচ্ছে।