বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২১ পূর্বাহ্ন

পাঁচবিবির সজনে ডাঁটা রপ্তানী হচ্ছে ১৪ দেশে

মোঃ মাসুদ পারভেজ রানা, করেসপন্ডেন্ট, জাগো২৪.নেট, পাঁচবিবি (জয়পুরহাট)
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৩

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পতিত জমিতে প্রতি বছরের মতো এবারও মৌসুমী সবজি সজনে ডাঁটার বাম্পার ফলন হয়েছে। অনুক‚ল আবহাওয়া এবং প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হওয়ায় গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার সজনে ডাঁটার উৎপাদন অনেক বেশি হয়েছে। ফলে সজনে ডাঁটা এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে সৌদি আরব, মালোশিয়া, সিঙ্গাপুর ও আরব আমিরাতসহ মধ্য প্রাচ্যের প্রায় ১৪টিরও বেশি দেশে রপ্তানী হচ্ছে।

কৃষি বিভাগ বলছে, সজনে ডাঁটার ১৭-১৮টি ভিটামিনের উপাদান রয়েছে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ ভিটামিন-এ ও সি উপাদান সবচেয়ে বেশি রয়েছে। সজনে ডাঁটা খেতে সু-স্বাদু হওয়ায় স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ।

গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়াই সজনে ডাঁটা স্থানীয়ভাবে বিক্রির পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। যাচ্ছে মধ্য প্রাচ্যের ১৪টির বেশি দেশে। চাষীরা জানায়, প্রথম দিকে বাজারে সজনে ডাঁটা প্রতি কেজি ১শ টাকার উপরে বিক্রি হলেও বর্তমানে বাজারে ব্যাপক আমদানি বেশি হওয়ায় বাজারে অনেক দাম কমে গেছে। অপরদিকে গ্রামে গ্রামে ফড়িয়ারা গিয়ে প্রতি কেজি ২৮-৩০ টাকা ক্রয় করছে। যা পাইকারী বাজারের দামের তুলনায় কেজি প্রতি ৫-৭ টাকা কম।

পাঁচবিবি বটতলী বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান নাহিদ জানায়, বটতলী বাজারে মুলত কচুর লতি বিক্রি হলেও মৌসুমী সবজি হিসাবে প্রচুর সজনে ডাঁটা কৃষকরা বিক্রি করতে নিয়ে আসে। মৌসুমে এখানে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার কেজি সজনে ডাঁটা ক্রয় বিক্রয় হয়।

ব্যবসায়ী শাহাজান আলী বলেন, সজনে ডাঁটার মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রচুর পরিমাণ সজনে ডাঁটা বিক্রি করতে আসে কৃষকরা। আমরা তাদের নিকট থেকে ন্যায্য মূল্যে ক্রয় করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে থাকি। শুধু তাই আমাদের এখানকার সজনে ডাঁটা ঢাকার কাওরানবাজার, শ্যাম বাজারে প্যাকেজিং হয়ে মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও রপ্তানী করা হচ্ছে। বটতলী বাজার থেকে প্রতিদিন ৩ ট্র্যাক সজনে ডাঁটা লোড হয় বলেও তিনি জানান ।

পাঁচবিবি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, সজনে ডাঁটা প্রধানত দুই প্রজাতির। এর মধ্যে এক প্রজাতির সজনে ডাঁটা বছরে তিন থেকে চার বার পাওয়া যায়, যাকে বলা হয় বারমাসী বা রাইখন্ড। অপরটি মৌসুমী হিসাবে পাওয়া যায়। তারা জানায়, এ উপজেলায় বানিজ্যিক ভাবে সজনে ডাঁটার চাষ না হলেও কৃষি বিভাগের আইপিএম, আইসিএম ও এনসিডিটি প্রকল্পের কৃষক মাঠ স্কুলের কৃষক কৃষানীদের মাঝে পতিত জমির আইল, পুকুর পাড়ের আইল, বাঁধের ধারে বাড়ির আশেপাশে এমনকি শহর বন্দরের যেকোনো ফাঁকা জায়গায় লাগানোর জন্য উদ্বৃদ্ধ করেন। এর কোনো বীজ বা চারার প্রয়োজন হয় না। গাছের ডাল কেটে মাটিতে পুতে রাখলেই গাছ জম্মায়। গাছের কোন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠে এ গাছ। বড়-মাঝারি ধরনের একটি গাছ থেকে ৫-৬ মণ পর্যন্ত সজনে ডাঁটা পাওয়া যায়।

বিনা খরচে অধিক লাভ হওয়ায় অনেকেই রাজশাহী ও ভারত থেকে বারমাসী জাতের চারা সংগ্রহ করে বাণিজ্যিকভাবে সজনে ডাঁটার চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ লুৎফর রহমান বলেন, কৃষি বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৩/৪ বছর আগে কৃষক-কৃষাণীর মাঝে সজনে ডাঁটা চাষে উব্দৃদ্ধ করা হয়। ফলে এই কয়েক বছরে উপজেলায় ব্যাপক ভাবে সজনে ডাঁটার উৎপাদন হওয়ায় এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছে। সজনে ডাঁটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, বহু পুষ্টিগুন ও খেতে স্-ুস্বাদু বলেও তিনি জানান।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | জাগো২৪.নেট

কারিগরি সহায়তায় : শাহরিয়ার হোসাইন