কুড়িগ্রামের উলিপুরের জুম্মাহাট এলাকার কেবল কৃষ্ণ গ্রামের আমজাদ হোসেন (৫২) বাড়িতে রয়েছে ব্যবহৃত গ্রামোফোনের সমাহার। সখের বশে কিনে রাখা বিভিন্ন প্রকার গ্রামোফোন যেন শোবার ঘরটাকে রীতিমত বানিয়েছে গ্রামোফোনের সংগ্রহশালা।
তার ঘরে হাতে বাজানো গ্রামোফোন রয়েছে ৮টি, ইলেকট্রনিক গ্রামোফোন রয়েছে ২০টি এছাড়া ৫ হাজারের বেশি প্লাস্টিক ও ৫০টি মাটির রেকর্ড ডিস্ক রয়েছে।আধুনিক যন্ত্রের ভীড়ে গ্রামোফোন হারিয়ে গেলেও আমজাদ হোসেন সখের এসব গ্রামোফোনকে হারাতে দেন নাই।তার ঘরে গ্রামোফোনের পুরোনো দিনের গান বাজনা শুনতে এখনো নানান বয়সের মানুষ ছুটেন তার বাড়িতে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আমজাদ হোসেন পেশায় একজন কৃষক।সখের বশে কিনতেন গ্রামোফোন।তার টিনের ঘরে এক কোনে রাখা শোবার ছোট খাট। ঘরের বেশির ভাগ জায়গা জুড়ে সেলফে পরিপাটি করে রাখা আছে হাজারো রেকর্ড ডিস্ক।মাটিতে খন্ড ইট দিয়ে রাখা বেশ কয়েকটি সাউন্ড বক্স।টুলের উপর রাখা পঞ্চাশ দশকের সংগ্রহ করা গ্রামোফোনটি এখনো নতুন চকচকে।তার সংগ্রহে রাখা কলের গান,গ্রামোফোনের গানের সুর আর ব্যঞ্জনায় মুখরিত হয় পুরো এলাকা।আমজাদ হোসেনের সংগ্রহশালায় রয়েছে আব্বাসউদ্দীন, আব্দুল আলীম,হৈমন্তী শুল্কা, কিশোর কুমার,আশা ভোসলে,অনুপ জলটাসহ শতাধিক শিল্পীর পুরানো গানের রেকর্ড।বছরের পর বছর সযত্নে রাখা গ্রামোফোন রেকর্ড সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজ তিনি করতেন।
আমজাদ হোসেনের সাথে কথা বলে জানা গেছে,জনতা মাইক সার্ভিস নামে একটি দোকান ছিল তার।দোকানে উঠা বসার কারনে আমজাদ হোসেনের গান সংগ্রহ করা মনে ধরে।১২/১৪ বছর বয়সে বাবার পাশা পাশি নিজে সখের গ্রামোফোন আর রেকর্ড ডিস্ক কিনতেন।সেগুলো সযত্নে রাখতেন তিনি।বাবার ব্যবহত সঙ্গীতীয় যন্ত্রপাতি ছেলে আমাজাদ হোসেন খুবই যত্ন করে রেখেছেন।এছাড়া উনিশদশকের শেষে আমজাদ হোসেন মোহাম্মদ পুরে থাকাকালীন কলের গানের রেকর্ডের সন্ধান পেলে সংগ্রহে রাখতেন। গ্রামোফোনের রেকর্ড ডিস্ক চোখে পড়লে কিনে সংগ্রহ করে রাখতেন তিনি। তার সংগ্রহে রাখা প্রতিটি রেকর্ড ডিস্ক ৩০০০-৫০০০টাকা দামে কিনেছেন বলে জানান তিনি। এখন আমজাদ হোসেনে সংগ্রহে রয়েছে ৬ হাজার রেকর্ড ডিস্ক।
তিনি জাগো২৪.নেট-কে আরো বলেন, আমি মায়ের মুখে শুনেছিলাম বাবার বয়স যখন ১৫-১৬ তখন থেকে কোথাও গান হলে ছুটে যেতেন তিনি। গানের প্রতি ছিল তার অন্য রকম টান।গান শুনে ভালো লাগলে সেই গানের রেকর্ড ডিস্ক সংগ্রহ করতেন।সেগুলো খুব যত্ন করে রাখতেন তিনি।বাবার মাইক সার্ভিসের দোকান ছিল। বাবার ব্যবহত অনেক রের্কড ডিস্ক, গ্রামোফোন,হারমোনিয়াম ছিল। যত্নে অবহেলার কারনে অনেক ডিস্ক হারিয়ে গেছে তবে যে ডিস্কগুলো আছে তা কৌশলে সংরক্ষণে যথেষ্ট চেষ্টা করছি। নিয়মিত ডিস্কগুলো পরিস্কার রাখছি। তবে আমার টিনের কাঁচা ঘরে কতদিন সংরক্ষণ করে রাখতে পারবো জানি না।একটা পাকা ঘর হলে প্রাচীন এই গ্রামোফোন ও ডিস্কগুলো যত্ন করে রাখতে পারতাম।

জাকির হোসেন জাগো২৪.নেট-কে বলেন, আমি কখনো গ্রামোফোনের গান শুনি নাই।আমজাদ হোসেন চাচার বাড়িতে গ্রামোফোনের গান শুনে ভালো লাগলো।প্রাচীন এই সঙ্গীতের যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ করতে পারলে নতুন প্রজন্মের কাছে খুবই সমাদৃত হবে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট কুড়িগ্রাম জেলা শাখার আহবায়ক শ্যামল ভৌমিক জাগো২৪.নেট-কে বলেন, প্রাচীন ঐতিহ্য গ্রামোফোন এক সময় ছিল গণ মানুষের মনের খোরাক।যত্ন, অবহেলা ও কালের বিবর্তনে গ্রামোফোন এখন নেই বললেই চলে।হাতে গোনা কয়েকটি গ্রামোফোন চোখে পড়লেও সংরক্ষণের অভাবে এ গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমজাদ হোসেনের সংগ্রহে রাখা কলের গান, রেকর্ড ডিস্ক ও গ্রামোফোনগুলো সংরক্ষণে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজনিয়তা রয়েছে বলে জানান তিনি।
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, জাগো২৪.নেট, কুড়িগ্রাম 

























